মহামান্য আমি কোন অপরাধ করিনি
মহামান্য, এই রক্তাক্ত সন্ধ্যায় জন্ম কবচ হাতে নিয়ে বলছি-
আমি কোন অপরাধ করিনি, আমি অতি সাধারণ একজন
বিশ্বাস করুন সুরক্ষিত মহাফেজখানায় আমার প্রবেশাধিকার ছিলোনা
নীলপর্দার অন্তরালে খিলান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে জিজ্ঞাসা করুন…
ভেতরের উষ্ণ হাওয়ায় কতিপয় ভদ্রবেশী মুখ এবং অপ্সরীদের যাতায়াতে
আমি কিংবা আমার মতো আরো যারা আছে তারা নিতান্তই দুর্মুখ!
মহামান্য, আপনি ভুল করেই আমাকে দোষারোপ করছেন
আমি আপনার সমাজের উচ্চবর্গীয় শ্রেণীর গোলাম, আমার হাত বাঁধা, পা বাঁধা
যদিও চোখ দুটো বেঁচে আছে, বুকে অজস্র রক্তক্ষরণ!
হাড়ের শিরায় শিরায় মরার বোধ জাগে, কেননা-
আমাদের পান্তায় নুনের অভাব, সঙ্গমে স্ত্রীর চোখে জল নামে!
মহামান্য, বিশ্বাস করুন আমি কোন অপরাপ করিনি,
মাঝেমধ্যে ক্ষমতাধর কেউকেউ আমার /আমাদের মুন্ডু তাঁদের চাহিদা মোতাবেক যোগান দেয়!
মহামান্য, এইটুকুই হয়তো আমার অপরাধ,
তাতে আপনি আমাকে কী শাস্তি দেবেন?
মৃত্যু, সেইতো মরেই আছি।
আমাদের বিস্মিত চোখ জোড়ায়
পরস্পর তাকিয়ে থাকি কিছুসময় চুপচাপ,
কিছুটা দৃষ্টি বিনিময়….
এইসময় তুমি হয়ে উঠো শান্ত স্থির এক নদী,
বুকের খুব গভীরে জলাশয়ের মতো শব্দ খেলা করে!
অজস্রবার অনুভব করেছি কুমারী মেয়ের শরীরী
গন্ধে জ্যোৎস্নার আলো ফুটে উঠে যেমনটি
আজো ফুটেছে।
তোমার মুখ থেকে বুক সবটায় এক অদ্ভুত আলোড়ন
ন্যাপথলিনের তীব্র ঘ্রাণের মতো আমিও তাতে উন্মোচিত হই
অতপর; আমাদের বিস্মিত চোখ জোড়ায়
জন্ম নিলো নতুন এক পৃথিবী।
মৃত্তিকার দু-হাত,নোনতা ঘাম
অর্ধ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে জীবনটাকে গুনতে থাকি-
উপলব্ধিগত- কৌড়ই ঢালের মতোই মড়মড়ে, কুনো ব্যাঙের মতোই নড়ে-চড়ে
শরীর ও মন- অতৃপ্ত আত্মার সিঁড়ি বেয়ে হয়ে উঠে ক্লান্ত পথিকের প্রতিচ্ছবি
জীবনটাকে ভাবতে থাকি শ্যাওলা পচা পুকুরের মতোই অনর্থক!
যদি- না আমার ঘা ঘেঁষে যখন হেঁটে চলে মৃত্তিকার দু-হাত, নোনতা ঘাম
জলের দর্পনে কেঁপে ওঠে সমস্ত শরীর,
স্নায়ুশিরায় খেলা করে প্রকৃতির দুর্নিবার দৃশ্য!
হৃদপিণ্ডে গতির ঝড় নিদেনপক্ষে নেংটি ইঁদুরের মতোই লম্পঝম্প দৌড়!
শৃংখলিত এবং প্রতারিত ভ্রমণ যাত্রা
অগ্নিগর্ভ রাজপথ থেকে একপ্রকার মুক্ত হলেও
অজস্রবার ভাঙ্গনে বুক পেতে দিয়েছি –
প্রায়শ; আমার মস্তিষ্কে অদ্ভুত এক শূন্যতা ভর করে-
রক্তহীন উন্মাদনা, পরাবস্তবতার হাতছানি, কুন্ডলী পাকিয়ে উঠা
সময়ের ব্যবচ্ছেদ, লোভ ও ক্ষুধার রাজ্যে মুক্তির আকাঙ্খা, এভাবেই…
খুব নিরবে চোখের কোনে জেগে উঠে অসংখ্য বিবর
বুকের ভেতরে বিস্মিত এক হতাশার আবির্ভাব,
শৃংখলিত এবং প্রতারিত হওয়ার সুবাদে আমার ভ্রমনযাত্রা ক্রমশ হয়ে উঠে তারামাছের মতোই চঞ্চল
কিংবা হতে পারে নিঃসঙ্গ মেদী কুকুরের মতোই করুণতর স্বর
অথবা পোঁদের কাপড় তোলা ছবির মতোই কুৎসিত!
বুকের ভেতর ঠাণ্ডা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ হয়, প্রতিধ্বনিও
প্রায়শই আমার বুকের ভেতর ঠাণ্ডা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ হয়, প্রতিধ্বনিও
ইউরিপিডিস কিংবা সফোক্লিসের নাটকের মতোই জীবনের রঙ পাল্টায়
নিষ্ক্রিয় মগজে প্রতিনিয়ত ছুরিকাঘাত করে অদৃষ্ট নিয়তি
সম্মুখে প্রকাশিত হচ্ছে ঘড়ার মদ, সবুজ হেরেম, কামরূপী চলাকলা
এরমধ্যেও আমি শব্দের ন্যাংটো হাওয়ায় জীবনের অর্থ খুঁজি,
কেননা অভদ্র আচরণ সহ্য করার জন্য আমার মেরুদণ্ড কিঞ্চিৎ বাঁকা
ইতর শ্রেণী কিংবা মহান চোরদের অনুগত দাস না হলেও
অমোচনীয় কালির মতোই বয়ে চলে জীবনের ধারাপাত।
আমার রক্তে উন্মাদনা
নক্ষত্র রাতের গভীরে কেউ একজন সামনে এসে দাঁড়ায়
প্রজাপতির কোমল স্পর্শের মতো স্নিগ্ধ এবং শব্দহীন
তাঁহার দর্পহীন নীল চোখ এবং আমার সম্মুখে
ভেসে আসছে একখানা হলুদ উড়না!
যেটি নিতান্তই সস্তায় লালদিঘির ফুটপাত থেকে কিনে এনে
মৃত্তিকার বুকে জড়িয়েছিলাম বিনিময়ে জুটিছিলো সতেজ চুম্বন!
প্রেমিকার শরীর থেকে বেজে উঠেছিলো সহস্র নিঃশ্বাসের ধ্বনি!
আজো জোৎস্নার গায়ে লেগেছে অজস্র রঙের ছোঁয়া
প্রতিটি রঙ যেনো মৃত্তিকার বুকের আলোড়ন, ভীষণ নরোম!
বিপরীতে আমার রক্তে উন্মাদনা, চৌকাঠে আগুন লেগেছে।
দেহাতীত ফসলের মাঠ