ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৮ চৈত্র, ১৪৩১, ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬
সর্বশেষ
স্মরণ সভা সফলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ:চসাস
হাটহাজারী উপজেলায় ১৩ টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৫ অনুষ্ঠিত
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিরসরাই ছাত্রদলের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
বাংলাদেশেকে ঘিরে ভারত, আমেরিকা, চীনের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের অর্ন্তনিহিত কারণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ
চট্টগ্রাম ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র,কার্যবিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত সভা
কিশোর গ্যাং- সমাজের অবক্ষয় ও করণীয়
বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইল’র নৃশংসতা গণহত্যা :দেশবিশ্বে তীব্র নিন্দা বিক্ষোভ প্রতিবাদ
সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন:সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অদম্য একুশ ‘র আনুষ্ঠানিক যাত্রা ও ঈদ পুনর্মিলনী

কথাশিল্পী জয়নুল টিটুর ‘হানিসাকার’ গল্পের রহস্য উম্মোচন- এটি একটি স্পাই থ্রীলার রহস্য গল্প

মনওয়ার সাগর

আমাদের গ্রামের বাড়ীতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান শেষে কথাশিল্পী জয়নুল টিটুর সাথে কিছুক্ষণ সাহিত্য নিয়ে জম্পেস আড্ডা হয়েছিল। ৯০ এর দশক থেকেই তাঁর লেখালেখির সাথে আমি পরিচিত।তখন আমি একটি পত্রিকায় কাজ করতাম।জয়নুল টিটুও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় লিখতেন।তখন তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই পটভূমিটা টানার অর্থ হচ্ছে জয়নুল টিটু নবীন কোনো লেখক নয়,নব্বই দশক থেকেই লিখছেন,বলা যায় লেখালেখিতে তিনি সিদ্ধহস্ত।
এ বছর একুশে বই মেলায় তাঁর দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।ব্যস্ততার জন্য আমার বই মেলায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি।তবুও ‘হানিসাকার’ গল্পটি নিয়ে আমারও কৌতূহল ছিল। অবশেষে গতকাল অন লাইনে আমার গল্পটি পড়ার সুযোগ হলো।

‘হানিসাকার’ পড়ে মনে হয়েছে – এটি একটি স্পাইথ্রীলার / রহস্য গল্প।যে গল্প রহস্য সমাধানের পাশাপাশি জয় করে নিবে পাঠকের মনও।
যেহেতু লেখক একজন বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা (অতি:ডি আই জি -পুলিশ) সেহেতু আমার ধারনা নিজের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার অনুপ্রেরণাতেই লেখক গুপ্তচর কাহিনী লেখা শুরু করেন।
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন ‘হানিসাকার’ এর অর্থ কি? সাধারণ পাঠকের কাছে নামকরণটা বেশ দুর্ভেদ্য মনে হয়েছে।নামকরণের এই রহস্যটাও গল্পকে সার্থক করেছে বলে আমি মনে করি। আমি যতোটা বুঝেছি – গল্পের মূল চরিত্র হানি মোহাম্মদ। সে গুপ্তচরবেশে মেথর সেজে ময়লা সাক করতো ( অর্থাৎ ময়লা চুষে নিতো,বা পরিষ্কার করতো)। সেজন্যই গল্পের নাম হয়েছে হানিসাকার। এ বিষয়ে গল্পের মধ্যেই লেখকের সরল স্বীকারোক্তি ছিল – “হানি মোহাম্মদকেই আমরা হানিসাকার নামেই ডাকতাম। হানি সাকশন ট্রাক চালায়,কম কথার লোক।সে এক বিশেষ কায়দায় ময়লাকে তরল করে সাকশন ট্রাক লাগিয়ে ময়লাকে পাইপ দিয়ে তুলে নেয় ট্রাকে”।
গল্পটি গৃহ যুদ্ধে জর্জরিত দক্ষিন সুদান এর এক যুবকের কাহিনী অবলম্বনে লিখিত।দক্ষিণ সুদান এর সরকারি নাম দক্ষিণ সুদান প্রজাতন্ত্র।দক্ষিন সুদান, হল পূর্ব আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। দক্ষিণ সুদানের পূর্বদিকে ইথিওপিয়া, দক্ষিণ-পূর্বে কেনিয়া, দক্ষিণে উগান্ডা, দক্ষিণ-পশ্চিমে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, পশ্চিমে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং উত্তরে সুদান। শ্বেত নীল নদের সৃষ্ট বিরাট জলাভূমি অঞ্চল এই দেশের অন্তর্গত;
দক্ষিণ সুদানে সরকার ও বিরোধী বাহিনীর মধ্যে বছরের পর বছর লড়াইয়ে প্রায় চার লক্ষ মানুষ নিহত এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হয়।
দেশটির সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হওয়া দ্বন্দ্বেরই সরাসরি ফল হচ্ছে গৃহযুদ্ধ।মূলত শীর্ষ দুই সামরিক নেতাকে ঘিরেই এই বিরোধ। এদের একজন হলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং সে কারণে তিনিই দেশটির প্রেসিডেন্ট।অন্যজন হলেন-আধা-সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফের কমান্ডার। তাদের ক্ষমতার দ্বন্দের কারনেই সুদান তখন গৃহ যুদ্ধে জর্জরিত এক জনপদে রুপান্তরিত হয়।
নিরাপত্তা টহল, অস্থায়ী ক্যাম্প পরিচালনা, সীমানা নিরাপত্তাসহ সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রমের পাশাপাশি যুদ্ধপীড়িত দক্ষিণ সুদানে কাজ করেছিল শান্তিরক্ষীবাহিনী।আমার ধারনা – লেখকও শান্তি রক্ষী মিশনে দক্ষিন সুদানে কাজ করে থাকতে পারেন।

সেসময় জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীদের একটি ক্যাম্পে বিশেষ কায়দায় ময়লা পরিস্কার করতো এক যুবক। এমন ভাবে করতো যেন ময়লা সাক(চুষে নেওয়া) করছে। এই জন্যই লেখক তাকে ভালবেসে ডাকতেন হানিসাকার। হানিসাকার এর কাজটি মেথরের হলেও সে খুব মনোযোগের সহিত কাজ করতো। এক বিশেষ কায়দায় পাইপের মাধ্যমে ময়লা পরিষ্কার করতো।তার কাজের ধরন, সততা, সহজ সরল স্বীকারোক্তি লেখককে মুগ্ধ করেছিল। এক পর্যায়ে লেখকের সাথে হানি সাকারের মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠে। গল্পে- হানিসাকার লেখককে দক্ষিন সুদানের সুন্দরী নারীদের বিয়ে করার কথাও বলেন। কেননা দক্ষিন সুদানে যুদ্ধে পুরুষ মারা গেলে মেয়েদের আধিক্য দেখা যায়।শরীয়া অনুযায়ী চার বিয়ে করারও সুযোগ ছিল তখন। সম্পর্কের গভীরতার এক পর্যায়ে জানা যায় হানিসাকার আসলে একজন রেবেল গ্রুপের গুপ্তচর।
গল্পের শেষে হানিসাকার এর মৃত্যু লেখককে খুব ব্যথিত করে।হানিসাকার এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পাঠককে বেশ কাঁদিয়েছেন লেখক, নিজের শব্দচয়ন আর সেই শব্দের জালে বুনে বাক্যগঠনের তালে।

সহজ, সাবলীলতা আর প্রাঞ্জলতা যথেষ্ট পরিমাণে ছিল লেখকের লেখনশৈলীতে। বিন্দুমাত্র ভিন্নতার চিন্তা না করেই একদম চিরাচরিত আর প্রচলিত সাধারণ বয়ানেই গল্প বলে গেছেন তিনি। চেষ্টা করেছেন অতি সহজে যেন গুপ্তচরবৃত্তির জগত থেকে পাঠকদেরকে ঘুরিয়ে আনতে পারেন। অবশ্য এক্ষেত্রে বলতেই হয় যে,থ্রীলিংস থেকে গল্পকে ক্লাইমেক্সের দিকে নিয়েছেন লেখক। পাঠককে রহস্যের মধ্যে রেখে কাঁদাতে পেরেছেন এটাই লেখকের সার্থকতা।
গুপ্তচর ভিত্তিক গল্পগুলো সাধারণত ননফিকশন হয়ে থাকে।কিন্তু ‘হানিসাকার’ ফিকশন, ননফিকশন নাকি সেমিননফিকশন সেটি পাঠককে কিছুটা দ্বিধান্বিত করবে। তবে পাঠকের দ্বিধা থাকলেও পাঠক ফিকশন, ননফিকশন ও সেমিফিকশনের এই উত্তেজনায় পূর্ণ রোলার কোস্টারে চড়ে গুপ্তচরবৃত্তির দুনিয়া থেকে ঘুরে আসতে পারবে। গল্পের শুরুতেই লেখক যে গল্পের ফাঁদ পেতেছেন পাঠকদের উদ্দেশ্য – তা একইসঙ্গে প্রশংসার দাবীদার এবং সফলও বটে। পাঠকদেরকে “তারপর কি হলো?” সূচক প্রশ্নে আঁটকে রেখে পুরো গল্পটা শুনিয়ে দেয়ার দারুণ ছক কেটেছেন লেখক। গুপ্তচরদের নিয়ে লিখতে গিয়েই লেখক গুপ্তকৌশল অবলম্বন করেছেন কিনা তা লেখকই ভালো জানেন!
গল্পটি আমাকে বেশ টেনেছে।আমার বিশ্বাস এই গল্পগ্রন্থটি পাঠকেরও ভালো লাগবে।
কথা প্রকাশ এর স্বত্ত্বাধিকারি জসিম উদ্দিন এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন।আশা করি গ্রন্থটি গ্রন্থটি – গল্পপ্রেমিকেরা ক্রয় করবেন,আমিও ক্রয় করবো।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved