চট্টগ্রাম: সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির কোটা বাতিল-সহ চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে কোটা আন্দোলনকারীরা। সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে তীব্র আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।
এরই ধারাবাহিকতা চট্টগ্রামেও আন্দোলনকারীরা কোটা বাতিল-সহ চার দফা দাবিতে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে একটি কর্মসূচিও পালন করেছে। যা চোখের পলকেই সোশ্যাল মিডিয়া গণমাধ্যমসহ সর্বোচ্চ আলোচনায় ঝড় উঠে সারা দেশ জুড়ে। কোটা আন্দোলন নিয়ে মানুষের মাঝে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা যা শীর্ষ আলোচিত হয় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে।
৭জুলাই, (রোববার) দুপুরে প্রায় ২ঘণ্টা চট্টগ্রাম নগরী গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি রাস্তা অবরোধ শেষে রাত সাড়ে সাতটার পর রাস্তা ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এতে চট্টগ্রামের দুই নম্বর গেট, ষোলশহর, লালখানবাজারসহ আশপাশের সড়কে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী ও সাধারণ মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে যান চলাচল।
আন্দোলনে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। যানজটের কবলে পড়েছেন অফিসফেরত যাত্রীসহ বিভিন্ন কর্মজীবীরা। লালখান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট জিইসি হয়ে টাইগারপাসগামী এবং টাইগারপাস থেকে বহদ্দারহাটগামী গাড়িগুলো লালখান বাজার এলাকায় আটকা পড়ে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত লালখান বাজারে অবস্থান করছেন আন্দোলকারীরা।
নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়ক অবরোধ করে কোটা বাতিলের দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিকেলের দিকে দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে সরে গিয়ে তারা অবস্থান নেন লালখান বাজার সড়কে।
সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। কোটা আন্দোলনে অচল চট্টগ্রাম শহর। টানা ২ঘন্টা মহাসড়ক অবরুদ্ধ ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে। কোটা আন্দোলনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে একযোগে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে ক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম। এতে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষার্থীরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা ভেঙ্গেই কোটা আন্দোলনে অবরুদ্ধ করে সড়ক।
কোটা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ। প্রোগ্রামে কোটা আন্দোলনের দাবিতে সড়ক অবরোধ। কোথাও কোথাও কোটা আন্দোলনে সড়ক অবরোধে খেলাধুলায় মেতেছে শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখা যায় কোটা বিরোধী আন্দোলন করতে। আন্দোলনে পুলিশের বাধা। কোটা সংস্কারের পরিপত্র বহালের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে । সারাদেশে কোটা আন্দোলনের দাবিতে ক্যাম্পাস ছেড়ে শহরের রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, মেয়েরা এখন মেধায় অগ্রসর। বিশ্ববিদ্যালয়েও মেয়েদের আসন ছেলেদের প্রায় সমান। উচ্চ শিক্ষায়ও মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এত বেশি কোটা থাকা বৈষম্যমূলক। তাই কোটা পদ্ধতি তারা বাতিল চান। আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন ছত্রী বলেন, তারা মেয়ে হলেও সরকারি চাকরিতে নারী কোটা চান না।
এদিকে, অবরোধের কারণে নগরীর মহাসড়কের উভয়দিকে অন্তত ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়ক ব্যবহারকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা।
তাদের অবস্থানকে কেন্দ্র করেই মূলত ষোলশহর, লালখান বাজার, টাইগার পাস, বহদ্দারহাট, জিইসিসহ নগরের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামের কোটা আন্দোলনের নেতা আবুল ফয়েজ মামুন বলেন,প্রথমে ষোলশহরের দিকে অবস্থান নিয়েছিলাম আমরা। সেখান থেকে লালখান বাজার সড়ক থেকে সরে আসি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে আজকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সকল ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালসহ ৪ দফা দাবিতে ছাত্র সমাজের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের আন্দোলন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে আমাদের কর্মসূচি।
বিশেষ উল্লেখ্য: কোটা নিয়ে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত। হাইকোর্টের রায় এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা তো সাবজুডিস। কারণ আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।
গতকাল যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতৃবৃন্দ গণভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে একটা কথা আমি না বলে পারছি না, আমরা দেখছি যে কোটা আন্দোলন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা সেটা বাতিল করতে হবে। নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে, এ ধরনের নানা কথা শোনা যাচ্ছে। সেটা একবার বাতিল করা হয়েছিল কিন্তু ফলাফলটা কি? তিনি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষার হিসাব যদি দেখা যায় তাহলে দেখা যেত আগে কোটা থাকাতে মেয়েরা যে সংখ্যায় সুযোগ পেতো সে সুযোগ কিন্তু এই গত ক’বছরে পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে কোটা আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে ফের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির কারণে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই অবরোধে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা।