ডিবি প্রধান হারুন। নানা কারণে শীর্ষ আলোচিত সমালোচিত দেশজুড়ে। এখন তিনি সাবেক ডিবি প্রধান। বিদায় কালে বলেন কোটা আন্দোলন সহিংসতায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা অগ্নিসংযোগ, হামলা-ভাঙচুর ও মেট্রোরেলে হামলা চালিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হারুন অর রশীদ।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপির গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে ডিবি থেকে বদলি উপলক্ষে বিদায়ী বক্তব্যে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতা-সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
কেউ যদি নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না। যারা ঘটনার সঙ্গে প্রকৃতপক্ষে জড়িত, যারা আগুন লাগিয়েছে, মেট্রোরেলে ভাঙচুর-অগ্নিকাণ্ড করেছে, রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ভবনে আগুন লাগিয়েছে, পুলিশ সদস্যকে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ডিবিতে থাকাকালীন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে এমপি আনার হত্যার মামলাসহ অসংখ্য খুনের ঘটনায় নির্ভুলভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে মামলার ক্লু বের করেছি।
আমরা কোনো নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার করিনি। আর প্রভাবশালী ব্যক্তি যত বড় ক্ষমতাসীন হোক না কেন জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেয়নি।’
হারুন বলেন, ‘আমি তিন বছর তিন মাস ডিবিতে কাজ করেছি। আপনারা সব সময় আমার পাশে ছিলেন।
আমি চেষ্টা করেছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মেনে ডিবিকে সাধারণ মানুষের আস্থার দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া। চাকরির তিন বছর তিন মাস চাকরিকালীন সময়ে আমি সাধারণ মানুষের কাছে ডিবিকে একটা আস্থার জায়গায় পরিণত করেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তথা বিশ্বের মানুষ জানে কারো কোনো সমস্যা হলে ডিবিতে গেলে প্রবলেম সলভ হতে পারে। এই মনে করে অসংখ্য মানুষ আমাদের কাছে আসছে। আমরা চেষ্টাও করেছি তাদের কাজটা সুন্দরভাবে করে দেওয়ার।
যার কারণে সাধারণ মানুষ ডিবির নামটা জানে। আমি চেষ্টা করেছি ডিবিকে একটা আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আরেকটি জায়গায় পদায়ন করেছে। ডিএমপিতে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। মানুষের সব শেষ ভরসাস্থলের জায়গা থানা। থানা যেন মানুষকে সেবা দিতে পারে সেই লক্ষ্যে আমি চেষ্টা করবো সাধারণ মানুষ থানায় আসে এবং সেবাটা পায়। যেকোনো ঘটনায় থানায় গিয়ে জিডি-মামলা করতে পারে। আমি চেষ্টা করবো থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থায় নিয়ে যেতে।’
দায়িত্ব পালনকালে ডিবিতে কীভাবে কাজ করেছেন, কী অবদান রেখেছেন সে ব্যাপারেও এ সময় কথা বলেন আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ডিবি থেকে ডিএমপি’র ক্রাইম (অপারেশন্স) বিভাগে বদলি হওয়া হারুন বলেন, “অনেক বড় বড় ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ মামলা ডিবিতে আমরা তদন্ত করেছি। আমরা তদন্ত করে তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে মামলার ক্লু বের করেছি। কোনো নিরীহ মানুষকে আমরা গ্রেপ্তার করি নাই। আর কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আমরা ছাড় দেইনি। তেমনিভাবে আমরা মনে করি, কোটা আন্দোলন ঘিরে যেসব মামলা হয়েছে, সেখানে যারা নির্দেশদাতা তাদের আমরা গ্রেপ্তার করব। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, অগ্নিসংযোগ করেছে, বিভিন্ন জায়গায় আগুন-ভাঙচুর করেছে, মেট্রোরেলে হামলা চালিয়েছে, তারা যেখানেই থাকুক তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমি সাধারণ মানুষের কাছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আস্থার জায়গা তৈরি করেছি। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ জানে কারও কোনো সমস্যা হলে ডিবিতে গেলে সমস্যা সমাধান হতে পারে। এই মনে করে অসংখ্য মানুষ আমাদের কাছে আসে। আমরা চেষ্টাও করেছি তাদের কাজগুলো সুন্দরভাবে করে দেওয়ায়। যার কারণে সাধারণ মানুষ ডিবির নামটা জানে। আমি মনে করি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আরেকটা জায়গায় পদায়ন করেছে। বিস্তৃত কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের শেষ ভরসার স্থল হচ্ছে থানা। থানা যেন মানুষকে সেবা দিতে পারে। আমি চেষ্টা করব সাধারণ মানুষ থানায় এসে যেন সেবা পায়। যেকোনো ঘটনায় থানায় জিডি করা, মামলা করা এটা যেন করতে পারে। আমি চেষ্টা করবো থানাকে সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা হিসেবে তৈরি করা।”
উল্লেখ্য, তার আগে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হারুন অর রশীদ। ২০২১ সালের মে মাসে যুগ্ম কমিশনার হিসেবে গোয়েন্দা বিভাগে পদায়ন পান আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ডিবিতে এ কে এম হাফিজ আক্তারের স্থলাভিষিক্ত হন হারুন অর রশীদ।