ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৮ চৈত্র, ১৪৩১, ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬
সর্বশেষ
স্মরণ সভা সফলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ:চসাস
হাটহাজারী উপজেলায় ১৩ টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৫ অনুষ্ঠিত
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিরসরাই ছাত্রদলের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
বাংলাদেশেকে ঘিরে ভারত, আমেরিকা, চীনের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের অর্ন্তনিহিত কারণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ
চট্টগ্রাম ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র,কার্যবিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত সভা
কিশোর গ্যাং- সমাজের অবক্ষয় ও করণীয়
বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইল’র নৃশংসতা গণহত্যা :দেশবিশ্বে তীব্র নিন্দা বিক্ষোভ প্রতিবাদ
সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন:সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অদম্য একুশ ‘র আনুষ্ঠানিক যাত্রা ও ঈদ পুনর্মিলনী

ছাত্র আন্দোলন ও আমার সন্তানের দ্রোহযাত্রা

ড. মনওয়ার সাগর

( উৎসর্গ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বীর শহীদদের)

আমি আমার সন্তানকে মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় বড় করেছি।আমি তাকে শিখিয়েছি – মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে – হার না মানা,অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, আমি তাকে শিখিয়েছি -মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে দেশপ্রেম।

আমি তাকে শিখিয়েছি – মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা।

আমি তাকে আরও শিখিয়েছি -যারা নিজের জন্য নয়, বিনা স্বার্থে দেশের জন্য, সার্বজনিন অধিকারের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়, নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কার্পণ্য করে না, প্রকৃতপক্ষে তারাই খাঁটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী।

আমি তাকে বলেছি -মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে হৃদয়ের গহীন থেকে উৎসারিত অনুভূতি।

আমি তাকে বলেছি -আমি বা আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী এটা বলার কোনো বিষয় নয়, এটা হৃদয়ে লালন করার বিষয়, মনে-প্রাণে ধারণ করার বিষয়। যারা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী তারা কখনো মুখে এ কথা বলে না, তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে এটা জানান দেয়।

এই চেতনা প্রতিনিয়তই আমাদের জাতিসত্তাকে নতুন নতুন আশা ও আকাঙ্ক্ষার বাণী শোনায়। এতে আমরা নতুনভাবে পুনর্জাগরিত হই, বৃদ্ধি পায় আমাদের কর্মস্পৃহা।
আমি আমার সন্তানকে বলেছি- পক্ষপাতমূলক অন্যায় আচরণ, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা,বৈষম্য ইত্যাদির কারণে শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে সংগ্রাম , সেগুলোকেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলা যায়।
তাই সে এখন মিছিলে যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যায়।

আমার সন্তান এখন বিশ্বাস করে – বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,স্বাধীনতার চেতনা,সংবিধান রক্ষার চেতনা।কেননা – এই আন্দোলন হার না মানার আন্দোলন, এই আন্দোলন
অন্যায় আচরণ, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা,বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আন্দোলন, এই আন্দোলন সার্বজনিন অধিকার ও দেশ রক্ষার আন্দোলন।ওরাই এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা।

আমি আমার সন্তানকে – বিশ্ব ইতিহাসের আলোচিত ছাত্র আন্দোলনের গল্প শোনিয়েছে।ইতিহাসের সাথে পরিচিত হতে শিখিয়েছি।

আমি আমার সন্তানকে ১৬০ খ্রীষ্টাব্দের ইতিহাসে প্রথম ছাত্র আন্দোলনের গল্প শোনিয়েছি। চিনের ইমপেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলনে শত শত শিক্ষার্থীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল।

আমি আমার সন্তানকে ১৮৪৮ খ্রীষ্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব ও বোহেমিয়ান বিদ্রোহের গল্প শোনিয়েছি,যে বিদ্রোহে
ফ্রান্সের শিক্ষার্থীরা রাজা ও সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেছিল।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দের ইতিহাসে
হোয়াইট রোজ আন্দোলনের গল্প শোনিয়েছি।
যে আন্দোলনে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাৎসি শাসনের নির্মমতার বিরুদ্ধে এক অহিংস প্রতিরোধ গড়েছিল।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৫২ খ্রীষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন এর গল্প শোনিয়েছি।যে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরিণামে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতী পায়, যে দিনটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৬০ খ্রীষ্টাব্দের গ্রিনসবোরো অবস্থান ধর্মঘট এর গল্প শোনিয়েছি।যে আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। নাগরিক অধিকার আইন পাস হয়, যা মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের একটি মাইলফলক ছিল।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৬৮ খ্রীষ্টাব্দের মে মুভমেন্ট এর গল্প শোনিয়েছি। যে মুভমেন্টে ফ্রান্সের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবি প্রতিষ্ঠা করেছিল।

আমি আমার সন্তানকে পাকিস্তানের ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ খ্রীষ্টাব্দের গণুভ্যুত্থান এর গল্প শোনিয়েছি।যে অভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধ এর গল্প শোনিয়েছি। যে যুদ্ধে ছাত্র জনতা মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৭৬ খ্রীষ্টাব্দের আফ্রিকার জাতিবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন এর গল্প শোনিয়েছি
যেখানে জোহানেসবার্গে হাজার হাজার শিক্ষার্থী
বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত দেশটির বর্ণবিদ্বেষী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটায়, নেলসন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৮৯ খ্রীষ্টাব্দের চীনের
তিয়েন আনমেন স্কোয়ার আন্দোলন এর গল্প শোনিয়েছি,যে আন্দোলনে চীনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় উদারনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল।

আমি আমার সন্তানকে চেকোস্লোভাকিয়ার ভেলভেট রিভল্যুশন এর গল্প শোনিয়েছি,যেখানে বার্লিন ওয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতনের দাবিতে সোচ্চার ছিল এবং এই আন্দোলনের ফলে চেকোস্লোভাকিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলএবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আমি আমার সন্তানকে বাংলাদেশের ১৯৯০ খ্রীষ্টাব্দের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এর গল্প শোনিয়েছি। যে
আন্দোলনে ছাত্ররা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছিল।

আমি আমার সন্তানকে ১৯৯৯ খ্রীষ্টাব্দের ইরানের
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্ষোভ এর গল্প শোনিয়েছি। যে আন্দোলন ইরানের রাজনীতিতে আজও মাইলফলক হয়ে আছে।

আমার সন্তানের চেতনা থেকে উৎসারিত হয়েছে -২০১৮ খ্রীষ্টব্দের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলন।

আমার সন্তান এখন জানে-বিশ্বরাজনীতিতে শিক্ষার্থীদের বারুদ হয়ে জ্বলে উঠার ইতিহাস,

আমার সন্তান এখন জানে-ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার ইতিহাস,

আমার সন্তান এখন জানে-বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ,আমার সন্তান এখন জানে – তার পূর্বসুরীদের ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ইতিহাস।

আমার সন্তান এখন জানে- শিক্ষার্থীরাই এ দেশের সকল ঐতিহাসিক অর্জনের পথ দেখিয়ে এসেছে, রাজপথের সৈনিক হিসেবে সরব থেকেছে সব সময়৷

আমার সন্তান এখন বলতে শিখেছে-
‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ।

আমার সন্তান এখন বলতে শিখেছে-
রাবার বুলেট, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে দমানোর দিন শেষ।

আমার সন্তান এখন বলতে শিখেছে -সকল শৃঙ্খল, অন্যায়-অবিচার ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তির সুতিকাগার হয়ে উঠতে পারে ছাত্র আন্দোলন।

আমার সন্তান এখন বিশ্বাস করে – যে শিক্ষার্থী ন্যায়-নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, সেই একদিন হয়ে উঠতে পারে জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের কারিগর।

আমার সেই সন্তান এখন বিশ্বাস করে- ছাত্র আন্দোলন সব সময়ই সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম

আমার সন্তান এখন জানে-ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার ইতিহাস,

আমার সন্তান এখন জানে-বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ,আমার সন্তান এখন জানে – তার পূর্বসুরীদের ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ইতিহাস।

আমার সন্তান এখন জানে- শিক্ষার্থীরাই এ দেশের সকল ঐতিহাসিক অর্জনের পথ দেখিয়ে এসেছে, রাজপথের সৈনিক হিসেবে সরব থেকেছে সব সময়।

আমার সন্তান এখন বলতে শিখেছে-
‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি ঘুরে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ।

আমার সন্তান এখন বলতে শিখেছে-
রাবার বুলেট, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে দমানোর দিন শেষ।

আমার সন্তান এখন বলতে শিখেছে -সকল শৃঙ্খল, অন্যায়-অবিচার ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্তির সুতিকাগার হয়ে উঠতে পারে ছাত্র আন্দোলন।

আমার সন্তান এখন বিশ্বাস করে – যে শিক্ষার্থী ন্যায়-নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, সেই একদিন হয়ে উঠতে পারে জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের কারিগর।

আমার সেই সন্তান এখন বিশ্বাস করে- ছাত্র আন্দোলন সব সময়ই সমাজ পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

আমার সন্তান এখন – আমাকে প্রশ্ন করে
এই মৃত্যু উপত্যকার রক্তাক্ত বাংলাদেশ কি তুমি চেয়েছো?
আমার সন্তান আমাকে প্রশ্ন করে – বাংলাদেশের সংবিধান ক্ষত বিক্ষত হোক এটা কি তুমি চাও?

যখন সংবিধানের প্রস্তাবনাকে ক্ষত বিক্ষত করা হয়,মৌলিক মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়, সাম্যের কথা বলে বৈষম্য হয়,যখন বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করা হয় – তখন কি করে এই দ্রোহ যাত্রা থামবে?

আমার সন্তান এখন আমাকে বলে – যে ক্ষমতার মোহ নেতাকে অন্ধ বধির ও স্বার্থপর করে তেমন নেতা আমি চাইনা।

আমি বার বার তার প্রশ্নবানে জর্জরিত হই,আমি বার বার তার যুক্তির কাছে হেরে যাই।

অবশেষে আমিও তাকে বিধাতার হাতে সোপর্দ করে
আলোর মিছিলে – দ্রোহযাত্রায় ছেড়ে দিলাম।
তোমরা জয়ী হও,বীরের বেশে ফিরে আসো।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved