পরিবারের মা-বাবার পর ঘনিষ্ঠতা ও হৃদ্যতায় যারা সবচেয়ে এগিয়ে থাকেন তাঁরা হলেন ভাই-বোন। এক টেবিলে বসে খাওয়া, এক বিছানায় ঘুম, একসাথে স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এরা পরস্পরের সঙ্গী হন। এমনকি মা কিংবা বাবার মৃত্যুর পরও যারা আমাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয় হয়ে থাকেন, তাঁরা ভাই-বোন।
‘দ্য সিবলিং ইফেক্ট’ বইয়ে জেফরি ক্লুগার বলেছেন, ‘আমাদের বাবা-মা আমাদের একটু তাড়াতাড়িই ছেড়ে যান। আমাদের জীবনসঙ্গী আর ছেলেমেয়েরা আসে বেলা গড়ালে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনের যাত্রায় কেবলমাত্র ভাইবোনেরাই আমাদের পাশে থেকে যান।
সত্যি বলতে, ভাইবোনের চেয়ে বড় আশীর্বাদ জীবনে আর নেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে জীবনের নানা হিসাব মেলাতে গিয়ে ভাইবোনের সম্পর্কেও চিড় ধরতে পারে। দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা, মতের অমিল, আর্থিক ব্যবধান বা সম্পত্তির বিরোধ সম্পর্কচ্ছেদের মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি করতে পারে।
ভাই বোনের শরীরে একই রক্ত বয়, তাই জেদের মাত্রাটাও হয় একই রকম। কেউ কারো সামনে নত হতে চান না। তাই ভাই বোনের সম্পর্কের জটিলতা নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে উভয় পক্ষকেই।
সময় বের করুন, নতুন স্মৃতি রচনা করুন :
যে সকল ভাইবোনের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকে না, লক্ষ্য করলে দেখবেন পারিবারিক কোনো আয়োজন ছাড়া তাঁদের সচরাচর একসাথে দেখা যায় না। যারা এক সময় একই টেবিলে বসে পড়তেন, তাঁরা হয়তো এখন আর একে অপরের ছায়াও মাড়াতে চান না!
কিন্তু ভাইবোনেরও উচিত নিজেদের জন্য সময় বের করা। যেমন কোনো উৎসব-আয়োজনে একসাথে মিলে কেনাকাটা করতে যেতে পারেন, উপহার প্রদানের বিষয়ে একসাথে আলোচনা করতে পারেন। এক বিকেলে কফি হাতে নিয়ে অতীতের সুন্দর সময়ের কথা স্মরণ করতে বসে চান ভাইবোনেরা মিলে।
ছোটবেলায় যে মানুষটির সাথে আপনি বসে খেতেন, এক বিছানায় ঘুমাতেন তাঁর সঙ্গে আজ যাকে দেখছেন সে মানুষটির মিল খুঁজতে যাবেন না। সময়ের সাথে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসে, আর আপনার ভাই বা বোনটিও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। সময়ের পরিক্রমায় তিনি যে মানুষটিতে রূপান্তরিত হয়েছেন, তাকে সাদরে গ্রহণ করুন। আপনি যদি বয়সে বড়ও হয়ে থাকেন, নিজের অহমিকা ধরে রাখবেন না। ছোট ভাইবোনের দোষত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন।
নিজেদের মধ্যে তুলনা নয় :
ছোটবেলায় কাজিনের জন্মদিনে আপনার ভাই কেকের বড় স্লাইস পাওয়ায় যে রাগ দেখিয়েছিলেন, তেমন অনুভূতি নিশ্চয়ই বড় বেলায় আর খাটবেনা! ভাই বা বোনের আয় আপনার চেয়ে বেশি কেন, তাঁদের বাড়ির মতো বড় বাড়ি আপনার নেই কেন, তাঁর সন্তান কোন কলেজে ভর্তি হলো- প্রাপ্তবয়সে এসব ভাবা বা তুলনা করা নিছকই ছেলেমানুষীর নামান্তর। বাস্তববাদী হোন এবং আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যতের আনন্দকে সঙ্গী করে নিন।
সন্তানদের মধ্যকার বিরোধ মেটাতে অভিভাবকেরও কিছু্টা অবদান রয়েছে। শুরু থেকেই তাঁদের ঝগড়ার সময়টায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিন রেফারির নয়।
সাধারণত তাঁদের মধ্যে ছোট সন্তানের পক্ষ নেয়ার প্রবণতা একটু বেশি থাকে। ও ছোট মানুষ, এসব একটু-আধটু করবেই তুমি বড়, তোমাকেই মেনে নিতে হবে কিংবা ‘তুমি কেন ওর মতো লেখাপড়ায় ভালো করতে পারছ না’, এ ধরনের মন্তব্য করে তাঁরা নিজেদের অজান্তেই এক সন্তানকে অন্য সন্তানের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলেন।
আসুন আমরা সকলেই মিলে ভাইবোনের সম্পর্ক ভালো জায়গায় নিয়ে জীবনযাপন করি।