হাটহাজারী থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে তার দায়িত্বকালীন সময়ে ঘটনার আড়ালে অপেশাদার আচরণের কালোঅধ্যায়। একের পর এক গোপন তথ্য ফাঁসে বেরিয়ে আসে নানান বেআইনি কর্মকান্ড কার্যক্রম নির্যাতনের লোমহর্ষক চিত্র। চাঞ্চল্যকর অবিশ্বাস্য লোমহর্ষক ভয়াবহ নির্যাতনের তথ্যচিত্র যেন সবরকম নিষ্ঠুরতা ও মধ্যযুগীয় বর্বর হীনআচরণ কেউ যেন হার মানায়। এমন ঘাতক নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য ওসি রফিক’সহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন নিহত ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীদের পরিবার।
ভুক্তভোগীরা জানান, আমাদেরকে শুধুমাত্র নির্যাতন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং রিমান্ড শেষে মুমূর্ষু অবস্থায় কারাগারে পাঠানোর পর কারাকর্তৃপক্ষকে বলে দিয়েছে আমাদেরকে যেন কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়া না হয়। যার ফলে কারাগারে আমাদের পরিবারের সাথে দেখা-সাক্ষাত, সাপ্তাহিক ফোনকল, নামায পড়ানো, কারো সাথে কথাবার্তা বলা সবই নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো। ভুক্তভোগীদ ও হেফাজত নেতারা এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য ওসি রফিকসহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
থানা হেফাজত নেতারা এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য ওসি রফিকসহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন ভুক্তভোগের পরিবার ও এলাকার সচেতন মানুষ। নির্যাতনের শিকার বিভিন্ন ভুক্তভোগীরা জানান বিভিন্ন
হাটহাজারী থানায় তৎকালীন ওসির দায়িত্বে থাকা রফিকুল ইসলাম বিরোদ্ধে ০৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই ঘটনায় হাটহাজারী মডেল থানায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
ওই মামলায় মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বর্তমান কর্মস্থল ঢাকার উত্তরায় এপিবিএন সদর দপ্তর থেকে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে এক ভুক্তভোগী হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা আসাদুল্লাহ মাওঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম, হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র ও স্থানীয় ক্ষুদ্রব্যবসায়ী মোঃ আহসান হাবিব নাহিদ, মোঃ রাজিব শফিউল্লাহ, মোঃ আব্দুর রহমান হেলাল, মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ আফতাব উদ্দীন, মোঃ জিয়াউল হক, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ আরিফুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন হাটহাজারী থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, হাটহাজারীর সার্কেল অফিসার শাহাদাত হোসেন, তৎকালীন ডিবির ওসি কেশব চক্রবর্তী, হাটহাজারী থানার সাবেক সেকন্ড অফিসার রাজিব শর্মা, পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টিলিজেন্স) আমির হোসেন, এসআই মুকিব হাসান, এসআই আমিরুল মুজাহিদসহ তাদের অন্যান্য সহযোগিরা আমাদেরকে রিমান্ডে এনে মিথ্যা স্বীকারোক্তি সহ চালানো হতো একের পর এক চরম অমানবিক নিপীড়ন নির্যাতন।
মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য প্লাস দিয়ে হাত-পায়ের নখ টেনে তুলে ফেলে। রড স্ট্যাম্প ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা-কোমর ভেঙে দেয়। ঘন্টার পর ঘন্টা হ্যান্ডকাফ দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। পুরুষাঙ্গ সহ সারা শরীরে বৈদ্যুতিক শক দেয়। দুই-তিনজন একসাথে ঘাঁড়ের উপর উঠে বসে থাকে। আমাদেরকে দিনের পর দিন ঘুমাতে দেয়নি। নামায পড়তে দেয়নি। অযু গোসল করতে দেয়নি। এক কাপড়ে নোংরা সেলের ভেতর ফেলে রেখেছিলো। খাবার খেতে দেয়নি। পানির বদলে পেশাব খেতে দিয়েছে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।
লাগাতার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে অসুস্থ হয়ে গেলে থানার সেলের ভেতর হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে লাথি কিল ঘুষি মেরে রক্তাক্ত জখম করেছে। মিথ্যা স্বীকারোক্তি না দিলে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। কাঁচা নখ তুলে ফেলা, কারেন্টের শক দেয়া এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়লেও কোনো ওষুধপত্র দেয়নি; বরং এই অবস্থায় আরো বেশি নির্যাতন করেছে, নামায দাড়ি-টুপি ইত্যাদি নিয়ে কটূক্তি করেছে।
হাত-পায়ের ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হতো, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতো, শরীরে অসহ্য ব্যথায় বেহুঁশ হয়ে গেলে বন্দীরা যখন কারাগারের মেডিকেলে নিয়ে যেতো, তখন হেফাজতের বন্দীদের চিকিৎসা নিষিদ্ধ বলে ডাক্তাররা ও ডিউটিরত কারারক্ষীরা আমাদেরকে মেডিকেল থেকে বের করে দিতো। কোনো ওষুধপত্র পর্যন্ত দিতো না। রিমান্ডের সময় হেফাজতের বন্দীদের পরিবার থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হতো। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে কারাগারে আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা পাঠাতো ওসি রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। মামলা থেকে বাঁচিয়ে দিবে বলে অনেক নীরিহ মানুষ থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের মাধ্যমে বিশাল মামলাবাণিজ্য করেছিলো উপরোল্লিখিত কর্মকর্তারা।
এই দিকে ভুক্তভোগীরা বলেন,হেফাজতকর্মীদেরকে রিমান্ডে টর্চার করার জন্য প্রশাসনকে প্রচুর অর্থায়ন ও মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে প্রয়াত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফির ছেলে আনাস মাদানী, মঈনুদ্দীন রুহি, আবু রেযা নদভী, মুফতী ফয়জুল্লাহ গংদের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় তাকে।এদিকে তাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে গেলে সংবাদ সম্মেলন করে হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।হেফাজত নেতারা অভিযোগ করেন, ওসি রফিক আওয়ামী লীগ নেতাদের সামনে দাম্ভিকতার সাথে বলতেন, হেফাজত অনেক তাণ্ডব চালিয়েছে। এবার আমি দেখে নেব। প্রয়োজনে হাটহাজারীতে ১০ হাজার লাশ পড়বে।
হাটহাজারী থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, গত ০৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ওই ঘটনায় হাটহাজারী মডেল থানায় দুটি হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। তবে, নতুন করে কোন মামলার অভিযোগ কোন আপত্তি আমার কাছে কেউ সরাসরি লিখিতভাবে করেননি। তবে কাউকে যদি ক্ষতি করে থাকে জ্বালিয়ে থাকে ভুক্তভোগীরা তো অভিযোগ আপত্তি তুলবেই।
উল্লেখ্য : হাটহাজারীতে ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন শুরু হয়। ওই সময় চট্টগ্রামের হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা থেকে বের করা একটি মিছিলে গুলি চালায় মডেল থানা পুলিশ। এতে চার শিক্ষার্থী নিহত হন।