অফিস ম্যানেজে চলছে ৫৬ কোটি টাকার নওগাঁ সড়ক ও জনপথ (সওজের) ১৮ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সংস্কার ও মেরামত কাজে অনিয়ম। যেন দেখার কেউ নেই। কাজ দেখভালের জন্য প্রকল্প ম্যানেজার থাকলেও অনিয়ম যেন রাস্তায় বাসা বেধেছে। সঠিক তদারকি ও দেখভালের অভাবে রাস্তার কাজে বেহালদশা।
নওগাঁ জেলার অন্তর্গত মান্দা-নিয়ামতপুর উপজেলার ১৮ দশমিক ২৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেরামত ও বর্ধিতকরণ (রিপিয়ারিং ও ওয়েডেনিং) কাজে ব্যাপক অনিয়ম দেখাগেছে। কাজটি ঢাকার এম.এ ইঞ্জিনিয়ারিং ভয়েনভেঞ্চার তমা কনস্ট্রাকশন করছেন বলে জানাগেছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছামত কাজে অনিয়ম করছেন। অফিস কর্তাদের ম্যানেজ করেই এমন নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করে যাচ্ছেন বলে স্থানীদের অভিযোগ। কাজের শর্তাবলী বা নিয়মানুয়ী লঙ্ঘন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামত কাজ করছেন। ব্লাকটপ ব্যবহারের নিয়ম না থাকলেও তারা শুধু ব্লাকটপ ও ভরাট বালির মিশ্রণ ঘটিয়ে কাজ করছেন। এরকম নিম্নমানের কাজে স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করছেন বলে স্থানীয় অনেকের অভিযোগ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাদের সহায়তায় নিম্নমানের কাজ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করছেন। যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে যাচ্ছেন। রাস্তার দুপাশে যে পরিমাণ মাটি দেওয়ার কথা সেটি না দিয়ে দায়সারা ভাবে মাটি দিচ্ছেন মাত্র। কোনমত মাটি দিয়ে রেইজিংয়ের ইট আটকিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত (সওজের) সহকারি প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে কাজ করছেন বলে অনেকের অভিযোগ। যার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালির পরিবর্তে ভরাট বালি ও মাটি ব্যবহার করে যাচ্ছেন।নিয়মনুযায়ী ৩০% বালি ও ৭০% পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলে সেটির পরিবর্তে ৫০-৬০% বালি এবং ৪০-৫০% (ব্লাকটপ) পাথরের মিশ্রণ ব্যবহার করে রাস্তায় ব্যবহার করছেন। কোন উৎকৃষ্টমানের পাথর ব্যবহার হচ্ছে না। দায়সারা কিছু উৎকৃষ্টমানের পাথর মজুদ রাখা হলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না।
এব্যাপারে সওজের এক দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্যসহকারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে ব্লাকটপের সাথে ভরাট বালির মিশ্রণ করে রাস্তায় দিচ্ছেন। নিষেধ করার পরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোন কথা শুনছেন না।
এব্যাপারে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে অবগত করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে উৎকৃষ্টমানের বালি ও পাথরের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ব্লাকটপ পাথর এবং মাটিযুক্ত ভরাট বালির মিশণ ব্যবহার করছেন।
সরেজমিনে গেলে দেখাগেছে, মধ্যরাত পর্যন্ত ভরাট মাটিযুক্ত বালির সাথে ব্লাকটপ মিশ্রণের কাজ চলছে। রাতারাতি সেগুলো মিশ্রণ রাস্তায় ব্যবহার করছেন। লোকদেখানো কিছু উন্নতমানের পাথরের স্তুপ রাখা হলেও সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সবুজের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি নতুন এসেছি। এবিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনারা দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দিনের সাথে কথা বলেন।
এব্যাপারে নওগাঁ সওজের সহকারী প্রকৌশলী নাজিম উদ্দীনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কাজে কিছু অনিয়ম হয়ে থাকে। আপনাকে ঠিকাদারের সাথে সাক্ষাত করে কথা বলিয়ে দিব। নয়তো আমি ঠিকাদারের সাথে কথা বলে যোগাযোগ করব। তবে এ কাজের বরাদ্দসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনারা নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে কথা বলেন।
এব্যাপারে নওগাঁ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক রাসেলের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।