ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৮ চৈত্র, ১৪৩১, ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬
সর্বশেষ
স্মরণ সভা সফলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ:চসাস
হাটহাজারী উপজেলায় ১৩ টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৫ অনুষ্ঠিত
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিরসরাই ছাত্রদলের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
বাংলাদেশেকে ঘিরে ভারত, আমেরিকা, চীনের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের অর্ন্তনিহিত কারণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ
চট্টগ্রাম ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র,কার্যবিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত সভা
কিশোর গ্যাং- সমাজের অবক্ষয় ও করণীয়
বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইল’র নৃশংসতা গণহত্যা :দেশবিশ্বে তীব্র নিন্দা বিক্ষোভ প্রতিবাদ
সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন:সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অদম্য একুশ ‘র আনুষ্ঠানিক যাত্রা ও ঈদ পুনর্মিলনী

চসিকে দুই যুগ প্রকৌশলীর জাল সনদে নিয়োগ: তদন্তে কমিটি

চসিকে জাল সনদে নিয়োগে দুই যুগ পার করলেন প্রকৌশলী! গুঞ্জন উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রশাসনিক আইনি প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত সিদ্ধান্তে সত্যতদন্তে উদ্বর্তন কর্মকর্তাদের তদন্তে নির্দেশ। বর্তমানে সংস্থাটির বিদ্যুৎ শাখার সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে কর্মরত। মেয়াদোত্তীর্ণ কোর্স কমপ্লিট করার একটি সনদ দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চাকরি) চাকরি বাগিয়ে নেন আমির আবদুল্লাহ খান। আব্দুর রহিম ও আব্দুল আওয়াল নামে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে দুই ব্যক্তি এ অভিযোগ আনেন। অভিযোগ তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগ সিটি করপোরেশন-২ শাখার উপসচিব খোন্দকার ফরহাদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্তে তিন সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদকে। এছাড়া শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তারকে সদস্য সচিব ও আঞ্চলিক কর্মকর্তা-১ রেজাউল করিমকে সদস্য করা হয়েছে।

সর্বশেষ দুই বছর আগে শ্রমিক লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সহকারী প্রকৌশলীর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদ বাগিয়ে নেন তিনি। ভুয়া সনদে চাকরির বিষয়টি জানেন চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের বেশিরভাগ কর্মকর্তা। প্রায় দুই যুগ ধরে এভাবে চললেও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি কেউ। কারণ, কখনও মেয়র, কখনও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দেন তিনি।

চসিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমির আবদুল্লাহ খান ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকে একটি তিন বছর মেয়াদি কোর্স কমপ্লিটের সনদ সংগ্রহ করেন। প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী যদি পড়াশোনা শেষ করে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে রেজাল্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত সাময়িক একটি সনদ ব্যবহার করতে পারেন তিনি; যার মেয়াদ ধরা হয় এক বছর। কিন্তু আমির আবদুল্লাহ খান সাময়িক সেই সনদ মূল সনদ হিসেবে ব্যবহার করছেন বছরের পর বছর। মূলত তিনি কয়েকবার চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করতে পারেননি। ২০০০ সালের মধ্যে পাস করতে না পারায় তার রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও শেষ হয়ে যায়।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম

চসিক সূত্রে আরও জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ ওই সনদ দিয়ে ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল ‘বাতি পরিদর্শক’ হিসেবে সিটি কর্পোরেশনে যোগ দেন আমির আবদুল্লাহ। তিনি তখন ডিপ্লোমা পাস দেখান। যদিও তখনও তিনি কাগজে-কলমে এইচএসসি পাস। ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাতি পরিদর্শকের বেতনে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান আমির আবদুল্লাহ। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি আগের সব নিয়োগ বাতিল করে তাকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেয় চসিক। তখনও তার এইচএসসির ওপরে কোনো সনদ ছিল না।

এদিকে, ২০১৪ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অতীতে যারা পাস করেননি তাদেরকে স্পেশাল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়। চসিকের কোনোপ্রকার অনুমতি ছাড়া আমির আবদুল্লাহ ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে এবং সনদ দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ২০১৮ সালে আমির আবদুল্লাহ ডিপ্লোমা পাসের সনদ হাতে পান।

চসিক কর্মকর্তারা জানান, চাকরিবিধি অনুযায়ী সংস্থাটির কোনো কর্মকর্তা কোনো কোর্সে ভর্তি বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন। অন্যথায় এসব সনদ বা কোর্স সার্ভিস ফাইলে যোগ করার সুযোগ নেই। কিন্তু আমির আবদুল্লাহ নিয়মের তোয়াক্কা না করে এটিকে সনদ হিসেবে সার্ভিস ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করেন। এমন জালিয়াতির পরও ২০২২ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা রেজাউল করিমের আত্মীয় এবং নিজেকে শ্রমিক লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদ বাগিয়ে নেন আমির আবদুল্লাহ। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে যখন এ দায়িত্ব দেওয়া হয় তখনও বিএসসি (সম্মান) পাস করা অনেকেই উপ-সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।

ভুয়া সনদে চাকরি— বিষয়টি জানেন চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের বেশিরভাগ কর্মকর্তা। প্রায় দুই যুগ ধরে এভাবে চললেও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি কেউ। কারণ, কখনও মেয়র, কখনও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দেন তিনি। সর্বশেষ দুই বছর আগে শ্রমিক লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সহকারী প্রকৌশলীর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদ বাগিয়ে নেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমির আবদুল্লাহ খান ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ডিপ্লোমা পাস করতে পারেননি। ২০০১ সালে তিনি সিটি কর্পোরেশনের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে নগরীর চকবাজার আলী প্লাজায় ‘হাসান এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি টিভি সার্ভিসিং সেন্টার খোলেন। যেখানে টিভি, ফ্রিজ, আইপিএস মেরামত করা হয়। ২০০৫ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে চসিকে চাকরি নেন তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আমির আবদুল্লাহ। শ্রমিক লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চসিকের সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আমির আবদুল্লাহ খানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন করে সার্টিফিকেট নিয়ে তার জালিয়াতির বিষয়টি সামনে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ জমা পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved