ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৮ চৈত্র, ১৪৩১, ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬
সর্বশেষ
স্মরণ সভা সফলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ:চসাস
হাটহাজারী উপজেলায় ১৩ টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৫ অনুষ্ঠিত
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিরসরাই ছাত্রদলের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
বাংলাদেশেকে ঘিরে ভারত, আমেরিকা, চীনের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের অর্ন্তনিহিত কারণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ
চট্টগ্রাম ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র,কার্যবিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত সভা
কিশোর গ্যাং- সমাজের অবক্ষয় ও করণীয়
বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইল’র নৃশংসতা গণহত্যা :দেশবিশ্বে তীব্র নিন্দা বিক্ষোভ প্রতিবাদ
সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন:সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অদম্য একুশ ‘র আনুষ্ঠানিক যাত্রা ও ঈদ পুনর্মিলনী

দেশের ইতিহাসে বিদেশি ঋণের সর্বোচ্চ রেকর্ড

দেশের ইতিহাসে বিদেশি ঋণের সর্বোচ্চ রেকর্ড! বিদেশি ঋণের বিশাল বোঝা দেশের অর্থনীতিঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ অশনি সংকেত। দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বাড়ছে সুদ পরিশোধ। গত ১৪ বছরে ঋণ বেড়েছে ২৮২ শতাংশ।

বিগত হাসিনা সরকারের আমলে দেশে নজিরবিহীন সর্বোচ্চ উন্নয়ন হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ব্যাংকিং খাত। ঋণ পরিষদে ব্যর্থতায় বাড়ছে দেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি। কিন্তু উন্নয়নের নামে একের পর এক মেগাপ্রকল্প যা ছিল দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুপরিকল্পিত সমন্বয়ে নয়। ছিল বেসামাল পরিস্থিতির অকল্পনিও অনিয়ম আর ঋণের বিশাল বোঝা। বিশৃঙ্খলা বাধাগ্রস্তে শত প্রশ্নবিদ্ধ। নানা জটিলতা অনিয়ম বিশৃঙ্খলা দুর্নীতি লুটপাটে ছিল শীর্ষ। বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদ পরিশোধও। যা দেশ বিদেশে আলোচিত হয়েছে। সমালোচিত হয়েছে নেতিবাচক দুর্নীতি লুটপাট নিয়মে। সর্বস্তরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মুখে মুখে।সারা দেশজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রিন্ট পত্রিকা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও গণমাধ্যমে।

শর্তমতে এসব মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হওয়ার পর বাইরের যে পরিমাণ ঋণ পাওয়া যাচ্ছে তা পরিশোধের চেয়ে কম। বিদেশি ঋণের বিশাল বোঝা বাংলাদেশের ঘাড়ে। বিগত শেখ হাসিনা সরকারের ১৪ বছরে ঋণ বেড়েছে ২৮২ শতাংশ। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সাল শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৫৭২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ১০১ দশমিক ৪৪৭ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট-২০২৪ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৫৭২ বিলিয়ন ডলার। ১৪ বছরের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ২৮২ শতাংশ বা ৭৪ দশমিক ৮৭৫ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সাল শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০১ দশমিক ৪৪৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেড়েছে সবেচেয়ে বেশি ২৭৪ শতাংশ। ২০১০ সালে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল ২২ দশমিক ২২২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ২৮৪ বিলিয়ন ডলারে।বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদ পরিশোধও। ২০১০ সালে ২০৩ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ করা হলেও ২০২৩ সাল শেষে সুদ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭২১ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ বেড়েছে ১৮০ শতাংশ। ২০১০ সালে আইএমএফের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সাল শেষে এসে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৩২ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ বেড়েছে। ২০১০ সালে ২ দশমিব ৯৪৭ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ থাকলেও ২০২৩ সাল শেষে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ২৩১ বিলিয়ন ডলারে। ঋণ গ্রহণ বেড়েছে ৩৮২ শতাংশ। একইভাবে ২০১০ সালে ২০৩ মিলিয়ন ডলার সুদ পরিশোধ করা হলেও ২০২৩ সাল শেষে সুদ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭২১ বিলিয়ন ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৭৪৭ শতাংশ।

সার্বিকভাবে বিদেশি ঋণ বাড়লেও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে ছয় মাসে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ কমেছে প্রায় ২ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার থাকলেও ৯ মাসে (চলতি বছরের জুন পর্যন্ত) বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭০৬ মিলিয়ন ডলার। পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো কয়েকটি মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হওয়ায় যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে পরিশোধ করতে হয়েছে তার চেয়ে ২৮ কোটি ডলার বেশি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ-আসল মিলে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। ঋণ পরিশোধ বাড়লেও উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থ ছাড় কমেছে। গত প্রান্তিকে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থ ছাড় কমেছে ৪৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। এ সময় অর্থ ছাড় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি ছিল ১২৮ কোটি ১৭ লাখ ডলার। নতুন করে ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৯ শতাংশ। এই সময়ে মাত্র ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮৮ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ বাড়লেও পরিশোধ করার সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে। তাহলে এ ঋণ কোনো শঙ্কা তৈরি করবে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো করতে গিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দুঃখজনক হলো এসব ঋণের অর্থে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যখন সম্পন্ন হবে তখন প্রকল্পগুলোর আয় থেকে ঋণের কিস্তির অতি সামান্য অংশই পরিশোধ করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ঋণের গ্যারান্টি দেওয়া হয়, এগুলোর অনেক কিন্তু সরকারি ব্যাংকই দিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি প্রতিষ্ঠানও আছে কিছু। এখন এই গ্যারান্টির ঋণগুলোও যদি তারা ফেরত দিতে না পারে, তাহলে এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। বিদেশি ঋণের বিশাল বোঝার চাপ তা দেশের সকলের ঐক্যমতের সমন্বয়ে গঠন মূলক সমাধান যথাসময়ে পরিশোধ করার বিকল্প সমাধান বের করা অতি জরুরী।

উল্লেখ্য:
বাংলাদেশে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। দেশের ইতিহাসে বিদেশি ঋণের এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন তথা ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।

২০০৯ সালের জুন শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ১৫ বছর ৮ মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সরকারি খাতের বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারের নিজস্ব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারি সংস্থার ঋণ রয়েছে।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved