অদৃশ্য সমাধী
আমরা ক্রমশ হারাচ্ছি মৃত্তিকার স্রোতে
পরিণত হচ্ছি ক্রমে কাল্পনিক ভূতে।
কলেবর মুখোশের মিশ্রিত সঙ্গম
তত্ত্ব কথা নীতি বাক্য লুপ্ত পুরোদম।
ভোগবাদী তা উচ্চাকাঙ্ক্ষা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহে
ভূতল ফাতাফাত করতে চায় মহা দর্পে।
রাষ্ট্র নয়তো রাজ্য যেন! পৈতৃক সাম্রাজ্য
জয়ের আশে আজ মানবতা ত্যাজ্য।
হৃদয় পশু জ্যান্ত রেখে পশু নাশ অর্ঘ্যে
মানসনেত্রে লোভের বহ্নি জ্বলে ভুখ স্বর্গে।
বসুধার কেন্দ্র হতে পরিধি অবধি
মানচিত্র জুড়ে স্থাপিত অদৃশ্য সমাধি।ঝুট প্রহসন
আজিকে প্রতিফলিত মদন ভক্তের
নেত্র জুড়ে সুখ,
অচেনা পরী হিয়ার বাঙ্কারে পুঁতিছে
কামের অসুখ।
নিশির স্বপন করে কল্পনা যাপন
রাত্রি জুড়ে মনে,
উষ্ণতার পথ ধরে শীতলতা খোঁজে
কামুক কম্পনে।
চৌম্বকীয় শিহরণ পীড়াপীড়ি করে
করতে আলিঙ্গন,
ভালোবাসার খোলসে রোমন্থন টুকু
ঝুট প্রহসন।ফিলিস্তিন তুমি কাঁদাতে জানো
ফিলিস্তিন! তুমি কাঁদাতে জানো…
ক্রন্দনে তপ্ত মরুচর অলক্ষ্যে শীতল হয়
প্রস্তরখন্ড হিম হয়ে তোড়জোড় মহাসিন্ধু তৈরীতে।
ফিলিস্তিন তুমি ব্যাথাতুর পর্যটনকেন্দ্র –
এই পর্যটনকেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ক্ষেপণাস্ত্র
আর ধ্বংসস্তুপের জাদুঘর।জাতিসংঘ একখন্ড অকার্যকর অসার ঢিবি
ঘোষণাগুলো অনুচ্চারিত ধ্বনির মতো অসার
৪৫’র লীগ অব নেশনস: ব্যর্থতার পুনর্জন্ম।ইসরায়েলি হায়েনার দীর্ঘতর ক্ষুধাতুর দৃষ্টি
দাবানলের মতো নিমেষেই গ্রাস করছে দিগন্ত।
হিরোশিমা-নাগাসাকির করুণ গাথা, আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি, পাবলো নেরুদার শেষ কবিতা – সবকিছুই
তুচ্ছ ইসরায়েলি রক্তপিপাসুর চরণ তলে।
শিশুহত্যার কার্কশ্য দৃশ্যকাব্যে জীবনানন্দ – জসীমউদ্দীনের কবিতাগুলো বিষম লাগে।
শেক্সপিয়ারের নাটকগুলো স্নায়ুতন্ত্রে উদ্দীপনা জাগাতে পারেনা।দুর্দান্ত ভাত
তেমন কিছু না তো – কেবল চায় দুর্দান্ত ভাত
পঙ্গপাল নয় মানুষেরা পেতেছে ঢের হাত।
তেমন কিছু না – কেবল চায় ঘুম পাড়ানি রাত
খাদের সংকট! রাতও এখন করছে পক্ষপাত।
ক্ষুধাতুর পেট মুমূর্ষু প্রাণ চায় দুর্দান্ত ভাত
জঠরানল করছে সাবাড় চন্দ্রসুধায় রাত।ত্রাসন ভুখে মহাদর্পে ধরার প্রাণে ত্রাস
সংহার রাজ্যে রহে ত্রাসে শঙ্কা ফেলতে শ্বাস।
উল্লাস-চঞ্চল শোষকের দল নিত্য বিহানে
পয়মাল যজ্ঞ মানব অর্ঘ্য নিরন্তর দানে।
এলিয়েন চোখ জিজ্ঞাসু প্রাণ কুণ্ঠিত কণ্ঠে
প্রত্যাশার বান সমর্পিছে দুর্দান্ত ভাতে।চেতনা
চেতনার মিছিলে দুর্ভিক্ষ দোর্দণ্ড
অথচ চেতনার স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ শ্রান্ত।
চেতনার পদতলে বারংবার কুর্নিশ –
চেতনার উচ্চরবে পথচারীর কর্ণ শ্রান্ত হয়।
কোথায় সেই চেতনা?
দেয়ালে এঁটে থাকা প্রতিধ্বনিতে
নাকি অত্যাচারীর আদুড় খড়গে?
আজন্ম পীড়িতের রক্ত চোষার উল্লাসে?
নাকি মৃত্তিকায় শায়িত! গণকবরে সমাধিস্থ?
চেতনা এখন কলরবের বদলে নিগূঢ়তম শব্দ
চেতনার স্তন হতে রক্তধারা প্রবাহমান – রক্তের
সায়রে চেতনার প্রতিবিম্ব।চিন্তার বিবর্তন
অবজ্ঞার ভার শ্বেতপত্রের গাঁয়
বক্ষে নেই তার খসড়া,
ঘুণ ধরেছে নাঙ্গা পত্রে
যন্ত্র পানে পসরা।
কবিতারা আজ নিষ্প্রভ
চিন্তা যান্ত্রিক পেনড্রাইভ,
আধুনিকতার দাপটে
প্রকৃতির দান আর্কাইভ।বিবর্তনের স্বাদ লভিতে
আধুনিক দাস ব্যাকুল,
আধুনিকতার প্রচ্ছদে
বন্দী হতে আকুল।
ধর্মবিশ্বাস লোপে আছে
নাস্তিক্যবাদ ঠেসে
কঙ্কাল মানব অত্যাধুনিক
নগ্ন ছায়ার পিছে।
