দেশাচার
মস্তিষ্কের চোরাবালিতে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব,
নরপিশাচের হাতে স্বাধীন বাংলার এক খাবলা মাংস।
ঘুণে খাওয়া হৃদপিণ্ডখানা অকেজো হয়ে গেছে,
সিস্টোল ডায়াস্টোলে ধরা পড়ছে না দূষিত রক্ত।অথচ আমার আকাশে অবারিত ফুলের বৃষ্টি
লাল, নীল, বেগুনী আরও যে কতো কি…
মুষ্টিবদ্ধ হাতে এক জোড়া গোলাপ বৃষ্টির জলে ধুয়ে যাচ্ছে।
তন্দ্রাবিলাসীর নিথর দেহ ঘিরে ধরেছে দু’চারটে পিঁপড়ে।বৃষ্টির জল দিয়ে চায়ের স্বাদ নিয়েছো?
কিংবা প্রেয়সীর কপালে চুম্বন এঁকেছো?শ্মশানঘাটে আম্র কাষ্ঠ দাউদাউ করে জ্বলছে
কলিজা পোড়া রোদে ধান মাড়াইও চলছে।
আজও বহমান বাংলায় কৃষ্টি-সংস্কৃতির মেলা হয়।
চড়ুইভাতিতে মান-অভিমানের পালা শেষ হয়।স্পর্শ
অন্ততকাল ধরে বেঁচে আছি আমি
শরীরে বিবর্ণ শ্যাওলার আস্তরণ ।
গুমোট অন্ধকারে ভ্যাপসা গন্ধ
নিস্তব্ধতায় আরশোলার অবাধ বিচরণ।অথচ…কিছুকাল আগেও
ষোড়শীর স্পর্শে প্রানবন্ত ছিলাম..
কত রোঁদ বৃষ্টি জোছনা আর
আনন্দ-বেদনার রাজ স্বাক্ষী আমি।জীর্ণশীর্ণ শরীরটাতে ঘুনে ধরেছে…
প্রায়শই ঝরে পড়ছি অল্প অল্প করে,
দিন দিন নিজের কাছে নিজেই মায়া হারাচ্ছি।
অবসাদ গ্রাস করেছে….দীর্ঘশ্বাস।আচ্ছা শ্যামা কেমন আছে?
কতদিন তার সাথে দেখা হয়না।
সেও কি সহজে ভুলে গেলো আমায়…
ঠিক আছে নতুন সংসার, কাজের চাপ
তাই বলে এভাবে একেবারেই !নিঃসঙ্গতা আর ভালো লাগছেনা।
কতোদিন আকাশ দেখিনা…
টুনটুনিটা, ওতো বেশ কিছুদিন ডাকছেনা।
তবে কি সেও অন্য কোথাও পাড়ি জমিয়েছে!
আমি তো সবার কথা ভাবছি কিন্তু তারা?
না না, আমার কথা ভাবার সময় কোথায়।শ্যামা গুনগুন করে কি যেনো একটা গান ধরতো
ধ্যাৎ এখন আর মনে পড়ছেনা, আসলে এমনই হয়।
যখন মনে করতে চাইবে তখন আর মনে পড়বেনাবেলা কি ফুরিয়ে এলো!
অবশ্য আমার কাছে সবই এক।
আজ প্রচন্ড হাসফাস করছে মনটা,
কোনো কিছুতেই স্থির করতে পারছিনা।
চোখের পাতা দুটো অসাড় হয়ে আসছে,
ঘুমের জন্যে নাকি চিরতরে,
ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা।
তবে এটা বুঝছি,
আমি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি,
অতলান্তের গভীরে…জিজ্ঞাস্য
মস্তিষ্কের নিউরনে অবান্তর প্রশ্নের আনাগোনা
জাগতিক উপলব্ধিতা নাকি পুনঃজন্মই শ্রেয়া।
স্বার্থসিদ্ধিতেই তো আমরা আছি বেশ।
তবে কেনো আর মিছেমিছি সততার পরিসর!
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বিত কুৎসিত চেহারা,
মরুভূমিতে পিচঢালা রাস্তায় অবাধ বিচরণ।সাদায় কালোর উপস্থিতি
অনুজীবীয় কিন্তু মেরুদন্ডী।
বিচিত্র রঙ,তবে উপভোগ্য
চামড়ায় চামড়ায় ঘর্ষণ।নির্বুদ্ধিতার বহিঃপ্রকাশ সেতো অনেকবার
তবুও রসের সিন্নির মিষ্টিতা কি ভুলা যায়!
ঈশান কোণে কালো মেঘের পাহাড় জমেছে
বৃষ্টির আগেই কৃষাণীর চোখে অবারিত বর্ষণওদিকে ক্রুসেড যুদ্ধের যে কোনো অবসানই হচ্ছেনা
জাঞ্জিবার-ইংরেজদের যুদ্ধের কথা কি মনে আছে?
মাত্র আটত্রিশ মিনিটেই আত্মসমর্পণ করে সমাপ্তি।
সুলতান সৈয়দ খালিদ তো সেদিন হেরে যাননি,
পড়িয়েছেন ক্রোধ,লোভ,হিংসা ও ঈর্ষার পান্ডুলিপিআচ্ছা, পূর্ণিমায় জলের তরঙ্গ বেশি সুন্দর!
নাকি ঘোর অমাবস্যায় জোনাকির আভা?
শিশিরে ভেজা তীর্যক আলোয় মাকড়সার জাল,
নাকি মৃদু আলোয় নববধূর ঘর্মাক্ত কম্পিত ওষ্ঠ!বাতাসা
নীল আকাশের ভিড়ে আমি শুভ্রতায় সেজেছি,
তুমিও সাজো লাল বেনারশীতে কাজলকালো চোখে।অভিযোগ! কই নেইতো…
স্বার্থসিদ্ধি, সেতো যুগ যুগান্তর।
তবে মিছেমিছি কেনো,
নিয়তিকে দোষারোপ করছো।ফাল্গুনের প্রথম সকালের সেই আশ্বাস,
হোক কুঁড়ে ঘর তাতেই আমাদের বসবাস।ঘর্মাক্ত শরীরের নোনতা স্বাদে বুদ হবো,
কিংবা ঝুম বৃষ্টিতে তোমার শরীরের উষ্ণতা নেবো।
চেরাগ জ্বালিয়ে সাপলুডুর খেলায় মত্ত হবো,
সুবেহ সাদিকে পুশকনিতে ডুব দেবো।পূর্ণিমায় এক্কাদোক্কার স্বাদ…
আহা… মানুষ বুঝি এমনই হয়।উঠোনে নিভু নিভু প্রদীপের শ্বাসপ্রশ্বাস
মনে ভীত সঞ্চার হয়।
কর্পূরের তীব্র গন্ধে আবৃত শরীর
বৃত্তাকার জটলার মধ্যমণি যে আমিই…কর্কটগন্ধ
সুশীলের মস্তিষ্কে তালা,
আইনের বর্ণান্ধতা,
প্রতিনিধির মুখোশ আর
মিথ্যে প্রলেপের আচ্ছাদন।চার দেয়ালে পোড়া ধোঁয়ার
বিদঘুটে কর্কট গন্ধ।
অন্যায়ের পর্বতশৃঙ্গের চূড়া,
দৃষ্টিসীমানা ছাড়িয়েছে।প্রতিবাদী মানুষটি মনের জ্বালা মিটাতে,
দু’পেক খেয়ে নেশার রাজ্যে বদ হয়ে আছে।দখিনা হাওয়া বইছে..
প্রজাপতি উড়ছে..
জোনাকি জ্বলছে..
ঝিঁঝি ডাকছে..ঘড়ির কাটার সাথে সবই
গতানুগতিক চক্র ক্রমিকে ঘুরছে।অমাবস্যার দুপুররাত..
নিভু নিভু মশালটি তেজে উঠেছে।দূরে একটি আলো..
দুটি আলো…
শত আলো…
হাজার আলো…
লাখো আলো…
কোটি আলো…সুপ্ত হৃদয়ে নতুন কুড়ির ফুলকি,
অগ্নুৎপাত হয়ে মেলে ধরুক পাপড়ি।
