আমার রক্তে উন্মাদনা
নক্ষত্র রাতের গভীরে কেউ একজন সামনে এসে দাঁড়ায়
প্রজাপতির কোমল স্পর্শের মতো স্নিগ্ধ এবং শব্দহীন
তাঁহার দর্পহীন নীল চোখ এবং আমার সম্মুখে
ভেসে আসছে একখানা হলুদ উড়না!
যেটি নিতান্তই সস্তায় লালদিঘির ফুটপাত থেকে কিনে এনে
মৃত্তিকার বুকে জড়িয়েছিলাম বিনিময়ে জুটিছিলো সতেজ চুম্বন!
প্রেমিকার শরীর থেকে বেজে উঠেছিলো সহস্র নিঃশ্বাসের ধ্বনি!
আজো জোৎস্নার গায়ে লেগেছে অজস্র রঙের ছোঁয়া
প্রতিটি রঙ যেনো মৃত্তিকার বুকের আলোড়ন, ভীষণ নরোম!
বিপরীতে আমার রক্তে উন্মাদনা, চৌকাঠে আগুন লেগেছে।মব
আমাদের মেরুদণ্ড কিছুটা বেঁকে গেছে, স্নায়ুতন্ত্রে শয়তান হাঁটে
মানসিক নগ্নতায় চিন্তাহীন, ত্রাসে অনুতাপ নেই!
হয়তোবা বিলাপ করে মাটি ও চাঁদ, আমরা সুর তুলি!নষ্টদের অধিকারে সযত্নে নিজেকে এড়িয়ে চলি
শশ্মানযাত্রা শেষে স্নান করে পূত পবিত্র হই!
নির্মম পেষণে, অন্ধকারে কিংবা নরকের ধোঁয়ায়
মানবিকতা লগ্নভ্রষ্টা হোক, আমার তাতে কী!আমরা ঘরকে ভীষণ ভালবাসি
কিসের ঘন্টা বাজে! অন্তরীক্ষে ম্রিয়মান সূর্য
রাজা যায় রাজা আসে -সোনার দেহ যে পুড়ছে!
সুঁড়িপথে হেঁটে চলে পরাধীন শব্দরা,
এই তো দেখছি-সত্য পুচকে মেয়ের মতোই আহ্লাদী!কবি কিংবা সম্পাদক কিংবা যাদের আমরা বলি বুদ্ধিজীবী
তারাও কী হাড় ও মাংসের উত্তেজনা হেতু উত্তরহীন!
কখন যে দেয়াল টপকে সাপ আসে ঘরে…
সত্যিই তো, আমরা ঘরকে ভীষণ ভালবাসি!পাপ ও দুঃখের সমান্তরালে
ইদানিং প্রায় অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখছি-
স্বপ্নের অগ্রভাগে শৈশব-কৈশোরের বেলাভূমি,
বন্ধুদের সাথে ডুবসাঁতার, ইস্কুল পালিয়ে
সিনেমা দেখা, প্রেমিকার প্রবঞ্চনা এবং বিভৎস খুন দৃশ্য!স্পষ্টত মনে হয় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি আমার দিকে চেয়ে আছে কটাক্ষমিশ্রিত দৃষ্টিতে
কিংবা সুন্দরী যে রমনী তাঁকেও মনে হয় হাটখোলার বারবনিতা!ইদানিং আমার বুকখানি মাঝেমধ্যে কেঁপে ওঠে
শরীরের তন্তুতে অদ্ভুত এক ছায়া প্যাঁচিয়ে যায়,
চোখের সম্মুখে কখনো ঘুরে বেড়ায় জলন্ত মেঘ কখনোবা যজ্ঞের কাপালিক!পাপ ও দুঃখের সমান্তরালে ছুটে চলে-
নিঃসঙ্গতা এবং মৃত্যুচিন্তা!মৃন্ময়ীর বুকেও বৃষ্টি হোক
রোদ্রতেজে সারাদেহ ভিজে আছে
মনটাও আজ পাথর, রাগরক্তে তেজস্ক্রিয়
ঝাপসা চোখে দূরে কোথাও দেখছি বানরের
সঙ্গম!
এই কী অসুখ নাকি মনোবৈকল্য?শ্যালো পাম্পের মুখে দাঁড়িয়ে কিছুসময়
ভেসে যেতে চাইলাম…..
অনুক্ত বোধের মধ্যে ডুব দিয়ে দেখলাম
শালিকের রথিক্রিয়া, বুঝলাম ভালবাসাটায় সত্য।
তাইতো কেবলি প্রার্থনা-
মৃন্ময়ীর বুকেও বৃষ্টি হোক, আমি প্লাবিত হবো।অশুভলগ্ন
একি অশুভলগ্ন!
শেষ হতে শুরু করেছে মনের উজ্জ্বলতা
এই যেনো অদ্ভুত এক প্রাচীন হাহাকার
বুকের খুব গভীরে কান্নার শব্দ বাজে!
সূর্যের তেজহীন গতিরেখা, নিঃস্তব্ধ রাত্রি
পরাঙ্মুখ অভিযোজন….তবে কী-
দুঃখ ও মায়ার জালে
নিজেকে বিসর্জন দিয়েই জীবনের মুক্তি!
দৃশ্যত কঠিন টানাপোড়ন,
রঙ্গমঞ্চে ভাঁওতাবাজদের সুদীর্ঘ ভাষণে
আমাদের জীবনের নূন্যতম আলোড়ন নেই
লুদলুদে হলুদ শব্দগুলো পচে মরুক।অদৃশ্য দেয়াল
একফোঁটা সিঁদুর মুছে গেলে
কিইবা এমন হবে-
সিঁদুরের মূল্য বুঝি মনের চাইতেও বেশী?সুমনা- ভালবাসা যেখানে মূল্যহীন,
অনাহুত তুমি!
সেখানে ঐ সিঁদুরের কি এমন মূল্য?জানিতো…
তোমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে
গঙ্গা থেকে ভলগা পর্যন্ত তোমার ভেতরের কম্পমান শব্দগুলো খুব শুনতে পায়,
এবং আমাকে অপরাধী করে দেয়!বিশ্বাস করো- সুমনা
এখনো প্রতিদিন তোমার প্রতীক্ষায়,
নিদ্রাহীনতাকে সঙ্গীকরে বেঁচে আছি।একদিন তুমি, আমি পারিনি
অদৃশ্য দেয়ালটুকু ভাঙতে…আজকাল শুধু এটুকুই মনে হয়
হৃদয় ভাঙ্গাও যে সবচেয়ে বড় ধর্মহীনতা।যদি তুমি মুছে ফেলো-
ভালবাসাহীন ঐ রঙটুকু
আমিও দ্বিধাহীন ভাবে ঝেড়ে ফেলে দেবো আলখাল্লা।তুমি- আমি আছি নিরাবরণ শুষ্কতায়
এক আঁজলা পানি খাওয়ায় দাও
দিলদরিয়া ভালবাসা দিমু তোমায়….ওগো, আঁজলা পানি কোথায় পাবো?
সোয়ারিঘাট, রাজাঘাট, বালুঘাট, বাদামতলী
গলুই গলুই গ্যাঞ্জাম…..
বুড়িগঙ্গার তীরে এখন শুধুই গন্ধ ভাসে!নদীরবুকে ঢেউ নেই, ভালবাসার বৈঠাও নেই
তুমি-আমি আছি, নিরাবরণ শুষ্কতায়।হয়তোবা আমি এক মাতাল পুরুষ
শব্দপুঞ্জে তোমাকে গেঁথে নিই পিঞ্জরে,
রক্ত অনুরাগে-
এঁকে যায় তোমার নিখুঁত ছবি।তুমি-আমার তৃষ্ণার্ত প্রেমিকা,
বাসনার শীৎকার!
মৃত বুকে জেগে উঠা প্রাচীন গোধূলি রঙ
যেমনটি অর্ধডোবা সূর্যাস্তের বিকেল।মাঝেমধ্যে শব্দ পতনের ধ্বণিও শুনতে পাই
তখন তোমার মুখটি হয়ে উঠে
কাদামাটি মিশ্রিত অবয়ব,
হলুদ চোখে দেখি বিবর্ণ কোরাসে
উড়ে যাওয়া গাঙচিল।হয়তোবা আমি এক মাতাল পুরুষ,
ভোদকার জলে ডুবে গিয়েও তোমাকে খুঁজি।কানামাছি
অবশেষে নিরীহ বালকটি শিকারীর জালে বন্দী!
ওরা পিরানহার মতো দাঁত কেলিয়ে হাসে, আঘাত করে….
বালকটির বুকজুড়ে অজস্র অপবাদ, তবুও সে নির্বিকার!
ঘাই হরিণীর মতো নির্বাক দৃষ্টি, রক্তিম ওষ্ঠে মৃদু কম্পন!
উদ্যত নাগিনীর ক্রমাগত বিষক্রিয়ায় বালকটি অভিযোগহীন
অতি ক্ষুধার্ত, দু মুঠো ভাত চাই আর একটু তরকারী
হয়তোবা এইটুকুই তাঁর চাহিদা!
বালকটির জানা ছিলোনা জন্ম থেকে মৃত্যু কতদূর….
ভাতের বিনিময়েও মৃত্যু এসে সন্নিকটে দাঁড়াতে পারে!শিকারীরা কানামাছি খেলে, খেলতে থাকে….
” কানামাছি ভোঁ ভোঁ যারে পাবি তারে ছো” কিংবা
তারা জানে-
” মধু হৈ হৈ আঁরে বিষ খাওয়াইলা” গান
গাইতে গাইতেও মানুষের জীবন কেঁড়ে নেয়া যায়!
