এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মুক্তবুদ্ধি ও বিজ্ঞানমনস্ক নারীরা মানসিক ভাবে খুব শক্তিশালী না হলে এবং যে কোন কিছুকে গ্রাহ্য না করার দৃষ্টিভঙ্গি না রাখতে পারলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ দ্বারা নিষ্পেষিত হবেই, বাজে ভাবে জাজমেন্টের শিকার হবে। এটা আসলেই কঠিন একজন মুক্তমনা এবং লিবারেল মাইন্ডেড নারীর জন্য নিজেকে প্রকাশ করার, নিজের ভাবনাগুলো এই মহাজাগতিক স্পেস এ ছড়িয়ে দেওয়ার কারণ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সবার অনুকূল থাকে না। পুরুষতন্ত্র আসলেই নারীকে ভয় পায়, নারী শক্তির প্রভাব খাটানোর দুর্দান্ত মাত্রাকে হিংসা করে এবং তাদের তথাকথিত “মেইল ইগো”কেই উপরে রাখতে নারীর প্রতি অবদমনমূলক আচরণ করে। তাই নারীকে মানসিক ভাবে খুব শক্তিশালী এবং কে কি বললো তা অগ্রাহ্য করেই প্রথা ভাঙ্গতে হবে।
এই মেইল বা পুরুষালী ইগোর সম্ভ্যাব্য বিবর্তনীয় কারণ হিসেবে আমার ধারণা প্রাচীণ যুগে বা শিকারী যুগে নারী গর্ভধারণের পর যখন আর বাহিরে যেতে পারতো না, যখন একটা কমিউনিটি তৈরি হলো, তখন পুরুষ নারীর দায়িত্ব নিতে গিয়ে নিজের মধ্যে একটা সুপেরিয়র কমপ্লেক্সিটি তৈরি করে অবচেতনভাবে, আর সেই সুপেরিয়রনেস থেকেই শুরু হয় নারীকে অধীনস্থ ভাবা। আর এই ভাবনা থেকেই নারীর যৌক্তিকতা, বুদ্ধিদীপ্ততা, স্পর্শকাতরতাকে মানলে, নারীর সিদ্ধান্তকে সাড়া দিলে, বা সেরুপ ইতিবাচক আচরণ করলে একজন পুরুষকে সেই সমাজ বা কমিউনিটি উপহাস করতো। কারণ কাউকে নিজের অধীন জ্ঞান করা মানেই তো নিজেকে উপরে রাখা। সেই অধীনস্থের বুদ্ধিকে, যুক্তিকে, জ্ঞানকে গ্রহণ করলে তো অধীন ভাব থাকে না,সেই কারণ থেকেই হয়ত এই পুরুষালী ইগোর বিবর্তন এবং আজকের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। পুরুষতান্ত্রিক আচরণ যে কেবল পুরুষ করে তা নয়, অবদমিত হতে হতে অনেক নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক আচরণ করে।
এদের বিরুদ্ধে নিজের বিকাশ ঘটানোর সবচেয়ে শক্তিশালী পথ হলো গ্রাহ্য না করে মৌন থেকে নিজের মুক্তভাবনা উদযাপনের সহিত ছড়িয়ে দেয়া, উন্মুক্ত করে দেওয়া, এতে সমাজ ডিস্টার্বড হবে ঠিকই এবং
এই ডিস্টার্বড না হলে সমাজ দিনে দিনে প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে। মুক্তবুদ্ধি এবং বিজ্ঞান মানুষকে স্বান্ত্বনা দিতে আসে নাই, আসছে মানুষকে ডিস্টার্ব করতে অর্থাৎ সংকীর্ণতা ও মিথ্যার খুঁটির গোড়ায় নাড়া দিতে যাতে করে চিরাচরিত ধারণার বাক্স থেকে বের হয়ে মানুষ মুক্তমনে এক অনন্ত আকাশে ডানা মেলে দিতে পারে৷