জাতীয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠানে প্রথমবার কবিতা পড়তে গেছি ঢাকায়। অনেককে তাঁর কথা জিগ্যেস করলাম; একজন বললো, প্রেসক্লাবে গেলেই তাঁকে পাবেন!
পড়িমরি করে প্রেসক্লাবে ছুটলাম। ইন্টারকমে কে বলে একটা গমগমে ভরাট গলা; বললো সরাসরি উপরে উঠে চলে আসো। উপরে গিয়ে দেখি; এক শুদ্ধ ঋষির মতো একজন সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন! আচমকা ঝড়ে পাওয়া লোকের মতো আমি তাঁর পদযুগল দুহাতে চেপে ধরি। তিনি তাঁর পা থেকে আমাকে শক্ত করে বুকে তুলে চেপে ধরে থাকেন।
শর্তসাপেক্ষে শীতল সেই রুমের বাইরে তখন চারু কষ্টের সন্ধ্যা। আমি আর হেলাল হাফিজ অনন্তকালের জন্য মুখোমুখি বসে থাকি। অকপটে তাঁকে বলেই ফেলি আমাকে ফেলে সঞ্চিতার চিরতরে চলে যাবার কথা..বিখ্যাত শিল্পী আসিফ ভাইয়ের তাকে নিয়ে গান গাওয়ার কথা! হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেতেই বলি; গুরু আপনার হেলেনের কি খবর??
কবি বললেন; ওর জন্যইতো আর কাউকে বিয়ে করা হলোনা। হেলেন অন্য আরেকজনকে বিয়ে করেছিলো ঠিকই; কিন্তু শেষপর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি।মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল হয়ে গেছে।
এসব কথা বলতে গিয়ে তখন কবির চোখে বাঁধভাঙ্গা লোনা জলের স্রোত..সান্তনা দিতে গিয়ে তখন আমার দুচোখেও লোনা জলের প্লাবন নামে।
একটা অসম্ভব মন কেমন করা অদ্ভুত সন্ধ্যায় আমরা মুখোমুখি বসে অন্ধকারকে স্বাক্ষী রেখে হু-হু করে কাঁদতে থাকি; অন্ধকারও আমাদের দুই কস্টাশ্রিত মুখশ্রী নিজের বুকেের ভেতর চেপে ধরে একাকার হয়ে ভাসতে থাকে।