ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৮ চৈত্র, ১৪৩১, ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬
সর্বশেষ
স্মরণ সভা সফলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ:চসাস
হাটহাজারী উপজেলায় ১৩ টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৫ অনুষ্ঠিত
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিরসরাই ছাত্রদলের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
বাংলাদেশেকে ঘিরে ভারত, আমেরিকা, চীনের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের অর্ন্তনিহিত কারণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ
চট্টগ্রাম ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র,কার্যবিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত সভা
কিশোর গ্যাং- সমাজের অবক্ষয় ও করণীয়
বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইল’র নৃশংসতা গণহত্যা :দেশবিশ্বে তীব্র নিন্দা বিক্ষোভ প্রতিবাদ
সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন:সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অদম্য একুশ ‘র আনুষ্ঠানিক যাত্রা ও ঈদ পুনর্মিলনী

গল্প: ব্যবধান

গতকাল সাড়ে আট কেজি ওজনের পুরানো পত্রিকা বিক্রি করে গিন্নি ২৯৭ টাকা পেলেন। কেরানিগিরির কাজ সেরে যখন বাসায় ফিরি,পত্রিকা বিক্রির সমুদয় টাকা উনি আমার হাতে তুলে দেন। টাকাগুলো গোনার প্রয়োজন বোধ করিনি। কারণ,দীর্ঘ সংসার জীবনে উনাকে বেশ চেনা হয়েছে। প্রয়োজন হলে চেয়ে নিবেন। পকেট হাতরাবেননা। কিন্তু টাকাগুলো পকেটে রাখতে গিয়ে বুকের অতলে হঠাৎ ছ্যাৎ করে ওঠে। বিড়বিড় করে বলি- আহারে! বেচারি। কত কষ্ট করে পত্রিকা জমিয়ে,এগুলো বিক্রি করলেন। অথচ,সব টাকা আমি নিজেই রেখে দিলাম। নিশ্চয়ই এর কিছু অংশ তাকে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। টাকাগুলোে দিয়ে গিন্নী আবারও রান্নাঘরে ফিরে গেলেন। তাকে ডেকে বললাম-বউ,অ-বউ-শুনছো?

রান্নাঘরের ভিতর হতে গিন্নি উচ্চকন্ঠে বললেন-বলো,শুনছি।
-একটু আসবে,প্লিজ?
-কেন?
-একটু দরকার ছিল।
-দাঁড়াও। ভাতের মাড়টা গেলে আসি। খানিকপর
গিন্নি আসলেন। তাঁর কপাল-মুখে ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা। কাপড়ের আঁচলে ঘাম মুছে বললেন-কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
-তাড়া আছে খুউব?
-হুম।
হাতে থাকা মোবাইলটি তার দিকে ঘুরালাম। স্ক্রীনে ভেসে আসা নিচের ছবিটি তাঁকে দেখিয়ে বললাম-দেখতো এই ভদ্রলোককে চিনো কিনা? ফরজদার ব্যক্তি।
ছবিটির দিকে গিন্নি একদৃষ্টে তাকালন। এবং বললেন-না।
-ইনি হচ্ছেন একজন গাড়ি চালক। নাম-সৈয়দ আবেদ আলী। তবে,আমাদের ব্যাংকার আবাদ ভাই নয়। সরকারি কর্ম কমিশন(পিএসসি)-এর চেয়ারম্যান স্যারের গাড়ি চালক। সাম্প্রতিক সময়ের ভাইরাল চিজ। গিন্নি বললেন-উনি যা-ই হোক না কেন, এখন তোমার সমস্যা কী? মারা গেছেন নাকি!
-আরে ধেৎ! তোমাদের মতো মেয়েদের এ এক সমস্যা। এত শর্ট ব্রেন নিয়ে জন্মাইছ কেন-এ্যাঁ?
গিন্নি খেঁকিয়ে উঠলেন। কিসের শর্ট ব্রেন? তোমার প্যাটপ্যাটানি শোনার অত সময় আমার নেই।
-প্লিজ। রাগ করোনা লক্ষ্মীটি। উনি মারা যাননি।
ভদ্রলোকের ছবি দেখিয়ে ব্যবধান বুঝাতে চেয়েছিলাম।
-কিসের ব্যবধান?
-শোন। উনি হচ্ছেন সরকারি বড়ো কর্মকর্তার বিশ্বস্ত গাড়ি চালক। উনার এবং আমার মধ্যে বয়স এবং জ্ঞান-বুদ্ধির বিস্তর ব্যবধান রয়েছে।
-তাই নাকি?
-একদম।
-ব্যবধানটা কী একটু শুনি।
-উনি অল্প শিক্ষিত হলেও সরকারি বড়ো কর্তার গাড়ি চালক। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গাড়ি চালান। আর আমি?
– গাড়ি চালক,গাড়ি চালাবে। এটাই সত্য। এখন তোমার কী সমস্যা?
-বলছিলাম কী,আমি মধ্যম গোছের শিক্ষিত। আবাসিক হোটেলে কেরানিগিরি করি। যার কাজ হলো অক্লান্ত পরিশ্রম করে চাল-ডালের হিসাব কষা।
-এখন কথা কী তোমার শেষ হয়েছে?
-প্লিজ,এমন করছ কেন? একটু শোন না।
-আমার কাজ জমে আছে। তোমার আজাইরা কথা শোনার অত সময় আমার নেই।
-আরে বউ একটু শোনো না। অল্পতেই এত আপসেট হও কেন?
-আমার কাজ আছেতো।
-আচ্ছা শোন। শর্টকাট করে বলছি।
-বল,তাড়াতাড়ি বল।
-সৈয়দ আবেদ আলী সাহেবের কষ্ট যন্ত্রণা দেখে স্বযং ঈশ্বরের কষ্ট-যন্ত্রণা শুরু হলো। তিনি পৃথিবীতে নেমে এলেন।
-এসব কি বলছ তুমি? মাথা ঠিক আছে?
-আছে ভাই আছে। শোনো না,প্লিজ। ঈশ্বর দূর থেকে দেখলেন,আলী সাহেব তাঁর স্যারের দামী গাড়িখানি একটি শপিং মলের নিচে রেখে নিকট দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছেন। ঈশ্বর আরেকটু কাছে এগোলেন। এবার দেখলেন, আলী সাহেবের এক হাতে ‘ডারবি’ সিগারেট।অন্য হাত দিয়ে প্লাস্টিকের বোতল থেকে জেনারেল ওয়াটার খাচ্ছেন। ঈশ্বরের কষ্ট যেন আরেক ধাপ বাড়ল।
-এসব কী বলছ তুমি?
-শোন না প্লিজ। এরপর ঈশ্বর,আলী সাহেবের সাথে হাত মেলারেন। বললেন-কেমন আছ আলী সাহেব? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
-মোটামুটি। তবে,আপনি?
-আমাকে চেনার কথা নয়। আমি স্বয়ং ঈশ্বর। জগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা।
-সৃষ্টিকর্তা?
-আজ্ঞে,হ্যাঁ। উপর থেকে দেখলাম,তোমার পরিবারের দৈন্যদশা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সো,নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে পৃথিবীতে নেমে এলাম। এখন তোমার জন্য কি করতে পারি,বল?
আলী সাহেব হু-হু করে কেঁদে উঠলেন। এরপর কান্না থামিয়ে বললেন-জনাব,সংসারের যন্ত্রণা আর সইতে পারছিনা। কাঁচা লংকা ভেঙে সকালে এক মুঠো পানতা ভাত খেয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং-এ হাত রেখেছি। কিন্তু…।
-কোনো কিন্তু ফিন্তু নয়। আমার টাইম কম। নিজস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য শপিং মলের ওপর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। অপরাহ্ণের দিকে একটি সভাও আছে। আমাকে দ্রুত ফিরতে হবে। শোনো,……!
-আমি কী পারব,জনাব?
-বেশ পারবে। তোমার মগজে বেশ কিছু বুদ্ধি ইনসটল করে দিয়ে যাচ্ছি। ওইসব বুদ্ধি খরচ করে একটা-দুইটা করে প্রশ্নগুলো বিক্রি করবে। একা সম্ভব না হলে,দু-চারজনকে ভিড়াতে পারো। তাদেরও কিছু উপকার হবে।
সময়ের তাড়নায় ঈশ্বর তাঁর কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় ফিরে গেলেন।
গিন্নির চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। তবুও নিজেকে স্থির রেখে বললেন-তারপর?
-তারপর আর কি হবে? সৈয়দ আবেদ আলী সাহেবকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কোটি কোটি টাকা, বিশাল সম্পদ,দামী গাড়ি,তিন তারকা মানের হোটেল…..
গিন্নি আমার সৈয়দ আলী সাহেবের বাকি কথা শোনার অপেক্ষায় থাকলেন না। সাতানব্বই টাকা মুঠোবন্দি করে রান্নাঘরের দিকে ফিরে গেলেন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved