ঢাকা, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ২৮ চৈত্র, ১৪৩১, ১২ শাওয়াল, ১৪৪৬
সর্বশেষ
স্মরণ সভা সফলে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ:চসাস
হাটহাজারী উপজেলায় ১৩ টি কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৫ অনুষ্ঠিত
এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিরসরাই ছাত্রদলের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
বাংলাদেশেকে ঘিরে ভারত, আমেরিকা, চীনের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের অর্ন্তনিহিত কারণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ
চট্টগ্রাম ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র,কার্যবিধি প্রণয়ন সংক্রান্ত সভা
কিশোর গ্যাং- সমাজের অবক্ষয় ও করণীয়
বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরাইল’র নৃশংসতা গণহত্যা :দেশবিশ্বে তীব্র নিন্দা বিক্ষোভ প্রতিবাদ
সন্দ্বীপের সীমানা নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন:সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অদম্য একুশ ‘র আনুষ্ঠানিক যাত্রা ও ঈদ পুনর্মিলনী

আধুনিকতার বেড়াজালে হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ী আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁত

আধুনিকতার বেড়াজালে ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ীদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী কোমর তাঁত শিল্প। অবশ্য এই ঐতিহ্য বিলুপ্ত হওয়ার পিছনে এই শিল্পে ব্যবহৃত বনজ সরঞ্জাম ও কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতাকেও দায়ী করছেন এই কাজে সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। পাহাড়ী এলাকায় শীতের সকালে বাড়ির উঠানে সোনালী রোদে কোমর তাঁতে পরিবারের প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় বুনতেন পাহাড়ী আদিবাসী নারীরা। এক সময় প্রায় প্রতিটি পাহাড়ি বাড়ির উঠানে কাপড় বুনার এ দৃশ্য দেখা যেতো। কাপড় বুনতে-বুনতে চলতো পড়শি কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা। দূর্গম পাহাড়ী পল্লীর কোন কোন বাড়িতে চোখে পড়লেও শহরের পার্শবর্তী বসতিতে এখন এমন দৃশ্যের দেখা পাওয়া বিরল।

জুমে উৎপাদিত কার্পাস তুলায় চরকায় তৈরি করা সুতা বুনো গাছ-গাছালির কস বা রস ব্যবহার করে বিভিন্ন রঙে রঙিন করা হতো। আর বিশেষজাতের বনজগাছের কাঠ ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জাম দিয়ে রঙিন সুতায় বোনা হয় কাপড়-চোপড়। কোমরে বেঁধে কাঠ ও বাঁশের সরঞ্জামে কাপড় বুনা হয় বলে এর নাম কোমর তাঁত।

চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যাসহ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সকল সম্প্রদায়ই কোমর তাঁতে পরিবারের বস্ত্র তৈরি করতো। অবশ্য প্রত্যেক সম্প্রদায়ের তৈরি বস্ত্র সামগ্রীর আলাদা নকশা, রঙ ও নাম রয়েছে। কোমর তাঁতে কাপড় বোনার ঐহিত্য শত শত বছরের পুরনো। সেই সময় থেকেই পাহাড়ি নারীরা নিজেদের পরনের কাপড় নিজেরাই বুনতেন। কোমর তাঁতেই বুনা হতো এসব কাপড়। একটা সময় কোমর তাঁতে কাপড় বুনার সক্ষমতাই ছিল বিয়ের কনের মূল যোগ্যতা। পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বেশিভাগই জুম চাষে নির্ভরশীল। নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজ করেন। অবসরে কোমর তাঁতে কাপড় বুনেন। সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই। দুর্গম পল্লী-গ্রামের নারীদের হাত ধরেই এখনো যা একটু টিকে আছে এই শিল্প।

কোমর তাঁতের কারিগররা জানায়, বন উজাড়ের কারণে আগের মত জঙ্গলে সরঞ্জাম তৈরির বিশেষজাতের কাঠ ও বাঁশ পাওয়া যায় না। জুম চাষও কমে গেছে। কার্পাস মানে জুমে চিতানো তুলা বা সুতা রঙ করার সেই গাছ-গাছালিও নেই। এছাড়া আদিম পদ্ধতিতে তুলা থেকে সুতা তৈরিও সময় সাপেক্ষ। তাই কোমর তাঁতের প্রযুক্তি সরঞ্জাম, কাঁচামাল সব কিছুই বাজার থেকে কিনতে হয়। আর বাজারে সুতাসহ প্রায় সব ধরনের উপকরণের দামই বেড়েছে। তাই এখন আর কাপড় তৈরি করে পোষায় না।

প্রতিভা বাদি মিলে চাকমা নামে একজন সৌখিন কোমর তাঁতি বলেন, বর্তমান বাজারে পাহাড়ি নারীর হাতে তৈরি একটি শীতের কম্বল বিক্রি করা যায় ৪০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। এমন একটি কম্বল তৈরিতে উল কিনতে হয় প্রায় সাড়ে ৩০০-৪০০ টাকার। এছাড়া উল কিনে মার দেয়া, টানা দেয়া, শুকানো এবং বুননে যে সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয় তাতে পারিশ্রমিক উঠে আসে না।

রিতা চাকমা নামে আরেক গৃহবধূ বলেন, এটি আমাদের চাকমাদের ঐতিহ্য। যুগ যুগ ধরে আমরা কাপড় বুনন করে আসছি কোমর তাঁত দিয়ে। এখন বাজার থেকে সুতা কিনে কাপড় তৈরি করব, সেই সামর্থ্য নেই। সুতার দাম বাড়তি। তাই সরকার আমাদের কম-মূল্যে সুতা দিলে খুবই উপকৃত হবো।একজন নারী উদ্ধোগতা নিলা চাকমা দোখাইয়া পাড়া মগবান রাঙামাটি এখানকার লোকজন যতই পড়ালেখা শিখছে, ততই ভুলছে নিজেদের ঐতিহ্যগাঁথা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সবকিছু ভুলে যাওয়া ঠিক নয়; তাতে ভবিষ্যৎ প্রজর্ন্মদের আদিবাসী সংস্কৃতি বেইন বুনা ভুলে যাচ্ছে, তিনি আরো বলেন, ‘শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি নিজের জন্য, পরিবারের জন্য কোমর তাঁতে কাপড় বুনি। নিজে ব্যবহার করি। প্রতিবেশী, স্বজন ছাড়াও গরীবদেরও দিই। এ শিল্প বাঁচাতে হলে, পাহাড়িদের মধ্যে আগের মত আগ্রহ-উৎসাহ বাড়াতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার পূঁজির যোগান দেওয়া। এ ক্ষেত্রে সুদমুক্ত বা স্বল্প সুদ ও তা সহজলভ্য করলে অনেকেই এগিয়ে আসবে। এছাড়া বাজারজাত করারও সুযোগ করে দিতে হবে।’, আধুনিকতার মোহে পাহাড়িদের অনেক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির মত কোমর তাঁতও আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। এব্যাপারে লোকাল এন জি ও সহ মারমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এসব ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সচেতনতামূলক কাজ করছে। তিনি বলেন, এসব সংস্কৃতি-ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারেরও দায়িত্ব আছে। কোমর তাঁত রক্ষায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিভাগের ভূমিকা আবশ্যক।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) বিশেষত, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বহু নারীকে উল-সুতা ও তাঁত সহায়তা দেয়া যেথো । বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিসিক কিনে এনে তা ১০ শতাংশ লাভে বিক্রি করার ব্যবস্থা দিতেন তাহলে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সহায়তা হতো,একদিকে হারিয়ে যাওয়া পাহাড়ি আদিবাসী বেইন বুনা সংস্কৃতি রক্ষা হতো,কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়,মাঝ পথে বন্ধ হওয়ায় প্রশিক্ষণসহ অনেক সরকারি সহায়তাই এখন আর নেই।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিসিকের মাধ্যমে ফ্রেম তাঁত ও গর্ত তাঁতের প্রশিক্ষণ, উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। কিন্তু কোমর তাঁত নিয়ে তাদের কোন কার্যক্রম নেই।’

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved