সাতকানিয়া পৌরসভা যেন দূর্নীতির অভয়াশ্রম, দেখার কেউ নেই, কতিপয় কর্মকর্তার লাগামহীন দূর্নীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না কোনভাবেই। ফলশ্রুতিতে জনদুর্ভোগ চরমে, সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে, নষ্ট হছে অন্তর্বতী সরকারের ভাবমূর্তি, বিশ্বদরবার থেকে পাচ্ছে দূর্নীতিপরায়ন দেশের তকমা।।
পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলির, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সাবেক কয়েকজন হোমরা-চোমরার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পৌরসভাধীন বিভিন্ন হাট-বাজার ইজারা, ও বিবিধ যান্ত্রিক যানের টোল পয়েন্টের ইজারা প্রদানে পুকুর চুরি। সরকারি তহবিল তসরুপ, উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব, এবং নাগরিক সেবায় চরম অনিয়ম পৌরবাসীর জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
সাতকানিয়া পৌরসভার বিগত তিন সনের সাতকানিয়া দেওয়ান হাট বাজার ও যান্ত্রিক যানের টোল পয়েন্টের ইজারা প্রদানে অনিয়মের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চান্ঞ্চল্যকর তথ্য।পৌরবাসির অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে সরেজমিন তদন্তে উঠেছে এসেছে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও নির্বাহী প্রকৌশলি গৌতম দাশ সহ রাঘব বোয়ালদের দূর্নীতির ফিরিস্তি, সেসবের যাবতীয় তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে।
বিগত বাংলা তিন সনের ১৪২৯, ১৪৩০, ১৪৩১ ইজারা প্রক্রিয়ার কোন নিয়ম নীতির বালাই নেই। সরকারি যেকোন হাটবাজার বা টোল স্যান্ড ইজারা প্রদানের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর নির্দিষ্ট তারিখে দরপত্র জমা এবং খোলার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে যেকাজগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেমন ( দরপত্রের তুলনামূলক বিবরণী তৈরী করে দরপত্র মূল্যায়ণ কমিটিতে রেজুলেশন সহ উপস্থাপন, সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচন করে তার থেকে ভ্যাট এবং আয়কর আদায় সহ ইজারার সব অর্থ আদায়পূর্বক চুক্তিনামা করে বাজার, স্ট্যান্ড বুঝিয়ে দেয়া, আদায় কৃত অর্থ নির্দিষ্ট তহবিলে জমা দেয়া, খাতওয়ারি সেই অর্থ ব্যায় করা ) কোনটাই করা হয়নি, পৌর সচিবের কাছে এসম্পর্কিত প্রমানাদি চাওয়া হলে তিনি কিছুই দেখাতে পারেননি। বিভিন্ন দলিলাদি ঘেটে জানা যায়, ২০২২ সালে সাতকানিয়া দেওয়ান হাট বাজার কে ইজারা পেয়েছেন তার কোন প্রমাণপত্র, চুক্তিনামা কোনকিছুই পাওয়া যায়নি অর্থাৎ ইজারার সম্পূর্ণ টাকা প্রায় এক কোটি লুটপাট করা হয়েছে, ২০২৩ সালের সাতকানিয়া দেওয়ান হাট বাজার এবং যাত্রিক যানের ইজারাও ও কোন প্রমাণাদি, চুক্তিনামা কোন দলিল পৌরসভার কাছে নেই, এক্ষত্রে দুইটি পয়েন্টের ইজারার সমস্ত অর্থ প্রায় দেড় কোটি লুটপাট করা হয়েছে। একইভাবে ২০২৪ সালে সাতকানিয়া দেওয়ান হাট বাজার ইজারা গ্রহিতা সাহেব মিয়া নামের এক ব্যক্তি, তিনি সর্বোচ্চ দর দিয়ে বাজারটি ইজারা গ্রহন করেন, কাগজে কলমে তাকে দরদাতা দেখানো হলেও তিনি পৌরসভাকে সব টাকা পরিশোধ করেননি এবং তারসাথে কতৃপক্ষের কোন চুক্তিনামাও হয়নি, এবং পরিশোধ না করে কিভাবে পৌরসভা ইজারা গ্রহীতাকে বাজার হস্তান্তর করেন এটা পৌরবাসির প্রশ্ন। উল্খ্যে যে চুক্তিনামা না করে কাউকে ইজারা প্রদান করা হাট বাজার ইজারা ও ব্যাবস্থাপনা ২০২৩ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ।
এ ব্যাপারে পৌর নির্বাহি কর্মকর্তা যিনি সাচিবিক দায়িত্বে আছেন এবং নির্বাহী প্রকৌশলি যিনি দরপত্র মূল্যায়ণ কমিটির একজন সদস্য, তাদের দুজনকে প্রশ্ন করলে কোন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি এবং কোন প্রমাণও দেখাতে পারেননি। বিগত তিন বছরের ইজারা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহনকারি কয়েকজন জানান যে বিগত তিন সনে প্রায় আড়াই কোটি টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং কয়েকজন সাবেক কাউন্সিলর পরস্পর যোগসাজোসে ইজারার টাকা ভাগাভাগি করে আখের গুছিয়েন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো একইভাবে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি লুটপাট করার মানসে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আবার বাজার ও টোল পয়েন্ট ইজারা প্রদানে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে ইজারায় অংশগ্রহনেচ্ছু বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এসব অনিয়মের প্রতিবাদ জানান এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের প্রস্তাব দেন কিন্তু তাতে কতৃপক্ষ সাড়া না দিয়ে ইজারা প্রক্রিয়া চলমান রাখেন, ফলশ্রুতিতে বিগত বছরগুলোতে যারা অনিয়মের মাধ্যমে ইজারা প্রদান ও গ্রহীতাদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে দরপত্র জমাদানের নির্ধারিত ১ম তারিখে (২৮ জানুয়ারি ২০২৫) কোন দরপত্র জমা পড়েনি।
এবং পরবর্তী নির্ধারিত ২য় তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতন্ডা হয় বিধায় বড় ধরনের গোলযোগ এড়াতে পৌর প্রশাসক মিল্টন বিশ্বাস টেন্ডার জমাদান স্থগিত করেন, ফলশ্রুতিতে ৩য় নির্ধারিত দিন ৩ মার্চ ২০২৫ অর্থাৎ আগামি পরশু সোমবার দরপত্র জমাদানের তারিখ নির্ধারিত হয়।
এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পৌরবাসী একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। জনমতের চাপের মুখে কত দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে দুদক সহ জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাতকানিয়া পৌরসভার বাসিন্দারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পর যথাযত প্রত্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী টেন্ডার কার্যক্রম গ্রহন করার দাবি তুলেছেন।