৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে এসেছিলো।দেশের গণমাধ্যমের ফলশ্রুতিতে এই খবরটি চারদিকে চাউর হলে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে।কিন্তু তরুণীর মা,ভাই ও বন্ধুকে সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।তরুণী জিজ্ঞাসাবাদে গণধর্ষণ বা ধর্ষণের মতো কিছু ঘটেনি বলে বর্ণনা দেন।আর এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার খবরে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়।কেননা সমুদ্র সৈকত স্পটে তরুণী (১৫) চারজন দ্বারা ধর্ষন হয়েছে বলে জানান।ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।ধর্ষণের ঘটনায় যখন উত্তাল সারাদেশ।ঠিক সেই মূহুর্তে তরুণীর গণধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভিক্টিম তরুণী তার ভাই ও বন্ধুকে নিয়ে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যায়।এক পর্যায়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাকে জোরপূর্বক তুলে নেয়ার চেষ্টা করলে সে চিৎকার চেঁচামেচি করে।এতে যুবকরা পালিয়ে যায়।তৎক্ষণাৎ মেয়েটির ভাই ও বন্ধু ছুটে আসেন।মেডিকেল রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।
৮ ও ৯ মার্চ অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি ভিডিও ক্লিপে তরুণী গণধর্ষনের কথা স্বীকার করে আর সেই ভিডিও ক্লিপের বিপরীত চিত্র তুলে ধরে পুলিশ প্রশাসনের কাছে।কেন হঠাৎ করে পাল্টে গেল তরুণীর বক্তব্য কি রহস্য জট বেঁধেছে ? সেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রতিবেদক অভিযুক্ত ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে।সেই সূত্রে জানা গেছে, স্কুল পড়ুয়া নবম শ্রেণীর ছাত্রী নাদিয়া (ছদ্মনাম) ধর্ষনের শিকার হয়েছে।আর এতে বয়ফ্রেন্ডের যোগসাজশ ছিল বলে জানা গেছে।তাকে অভিযুক্ত যুবক রিপন গভীর জঙ্গলে ধর্ষন করার পর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ ও অন্য সহযোগী জোরপূর্বক জঙ্গলে তুলে নিয়ে যায়।এরপর তাদের মধ্যে কি হয়েছে বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না।আমি এখানকার স্থানীয় না হওয়ায় তাদের বাঁধা দিতে পারিনি।আপনারা আমার নামে চাইলে মামলা দেন অথবা আমি মেয়েটিকে বিয়ে করতে সম্মত আছি।
আর বিষয়টি রাজনৈতিক প্রভাবে ও প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে বলে ঘটনার সত্যতা মুহূর্তে পাল্টে যায় বলে জানা গেছে।
ধর্ষণে অভিযুক্ত চার যুবক হলেন ,১/ মোঃ রিপন (৩৫) পিতা-অজ্ঞাত, সে সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা, ২/ মোঃ পারভেজ ( ২৭), পিতা-নুর আলম ভুঁইয়া, গুলিয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা, ৩/ মোঃ হাসান (৩০), পিতা- শাহাজাহান, রমজান আলী বাড়ির বাসিন্দা সহ অজ্ঞাত আরো ৬/৭ জন যুবক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে দীর্ঘদিন ধরে চুরি, ছিনতাই, শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা ঘটেছে।আর এসব ঘটনা রাজনৈতিক প্রভাবে আবার হুমকি ধমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকায় মিমাংসা করে ফেলে।আজকের ঘটনার সঙ্গে শুধু চারজন নয় আরো ১০/১২ জন বখাটে যুবক জড়িত রয়েছে।এদের অপকর্মের কারণে এলাকার বদনাম হয় আমাদের সম্মানের উপর আঘাত আসে।আর রমজান মাসে কিভাবে একজন মেয়ে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘুরতে আসে। এক্ষেত্রে মেয়ের পরিবারকে আরো সতর্ক হতে হবে।তবে আমরা দোষীদের বিচার চাই।
সচেতন মহল বলছেন, স্বৈরাচার সরকার হাসিনার পতনের পর একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।সেই সুবাদে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী এবং আওয়ামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।যাতে তারা বলতে পারে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হচ্ছে।মূলত নতুন বাংলাদেশে তাদের এসব অপকর্ম কারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিছু লোভী এবং স্বার্থান্বেষী মহল।এক্ষেত্রে প্রশাসনের আরো মনোযোগী হতে হবে।আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এমন ঘটনা আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।যে বা যারা জড়িত থাকুক প্রকৃত ঘটনা সামনে এনে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে হবে।যদি কোন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঘটনাকে অন্যদিকে মোড় দেয়া হয় তাহলে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) মোঃ লাবীব আবদুল্লাহকে একাধিক মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ধর্ষণের বিষয়টি চাপে পড়ে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে কিনা জানতে মুঠোফোনে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মোঃ মজিবর রহমান বলেন, এই বিষয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে (মামলা নং ১০ (৩) ২০২৫ )। মেয়েটির ভাষ্যমতে, সে গণধর্ষণের শিকার হয়নি।অভিযুক্ত যুবক রিপন বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে জানালে তিনি বলেন তাহলে সে তথ্য আমাদের দিন।যেহেতু সে ধর্ষনের বিষয়টি স্বীকার করেনি।সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তার মেডিকেল করাইনি।