নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। সোমবার ২৪ মার্চ, সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ফেরি ছেড়ে যায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ার উদ্দেশ্যে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চালু হওয়া এ সেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত ছিলেন। এ উপলক্ষে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণ দিয়েছেন। উল্লেখ্য চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ সরাসরি ফেরি চালুর মাধ্যমে প্রায় চার লাখ সন্দ্বীপবাসী নিরাপদ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা পাচ্ছেন। বাস, ট্রাক, ট্যাঙ্ক লরি, মিনিবাস, প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ফলে এই অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে। বিআইডব্লিউটিএ চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক কামরুজ্জামান জানান চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে যেতে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লাগছে। জোয়ার-ভাটা হিসেব করে প্রতিদিন যাওয়া-আসা মিলিয়ে চারবার ফেরি চলাচল করবে। ফেরিতে ছোট-বড় ৩৫টির মতো যানবাহন পরিবহন করা যাবে।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরা অংশে ৭০০ মিটারের একটি জেটি নির্মাণ করে বিআইডব্লিউটিএ। এরপরের বছর ২০১৪ সালে তাঁদের সঙ্গে ঘাট পরিচালনাকারী সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের একটি চুক্তি হয়। চুক্তিতে তিন বছরের জন্য প্রতিবছর ৪০ লাখ টাকা টোল নির্ধারণ হয় বিআইডব্লিউটিএর। তিন বছর পর টোল বাড়িয়ে বার্ষিক ৫৫ লাখ টাকা টোলে আবারও দুই বছরের চুক্তি হয় দুই সংস্থার। এরপর আর চুক্তিতে না গিয়ে দুই সংস্থা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ঘাটের মালিকানা নিয়ে উভয় সংস্থার দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঘাটের দুর্ভোগ কমাতে আন্দোলন শুরু করে সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। ২০২০ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাক্কলন নির্ধারণ করতে বিআইডব্লিউটি
এর পক্ষ থেকে বর্তমান পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি সম্ভাব্য তিনটি নৌপথ পরিদর্শন করে ফেরি চলাচলের জন্য গাছুয়া আমির মোহাম্মদঘাট (সন্দ্বীপ)-বাঁকখালী (সীতাকুণ্ড) রুট চূড়ান্ত করে। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৩ সালের মার্চে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের দিকে ২ কিলোমিটার সড়কও নির্মাণ করে। নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কটির সাগরের দিকের অংশ প্রবল জোয়ের ঢেউয়ে ধসে গেলে সেখানে ঘাট নির্মাণে সংশয় তৈরি হয়। এরপর আরও একাধিকবার কমিটির সদস্যরা উপযুক্ত নৌপথ নির্ধারণে পরিদর্শন করেন। গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সন্দ্বীপের বাসিন্দা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আবারও উদ্যোগী হয়ে ফেরিঘাট নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেন। তাঁর প্রচেষ্টায় পুনরায় সে বছরের ২৯ আগস্ট একাধিক ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে বিআইডব্লিউটিএর গঠিত কমিটি। পরে কমিটি বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়।