ড. মনওয়ার সাগর
প্রসঙ্গ: কিশোর গ্যাং- সমাজের অবক্ষয় ও করণীয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ ও দমন করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের জন্য কিশোর গ্যাং ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা এমন কোনো অপরাধ নেই যা করছে না।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটির ফিরোজশাহ কলোনীতে কিশোর গ্যাংগ এর নির্যাতনে আমার এক পরিচিত ডাক্তার কোরবান আলী মারা গেলেন দেখে মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো।তিনি তার সন্তানকে কিশোর গ্যাং এর নির্যাতন থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও প্রাণ হারান। ইদানিং আমাদের আবাসিক এলাকার আশে পাশেও কিশোর গ্যাং এর তৎপরতা বেড়েছে।আমরা যদি এখন থেকে সচেতন না হই তাহলে ভবিষ্যতে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং সমাজের জন্য এক মারাত্মক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই সমাজে এই গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এদের কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কিশোর গ্যাং আসলে কারা? কিশোর গ্যাং হচ্ছে ১৮ বছরের নিচে যেসব কিশোর দলবদ্ধভাবে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, অন্যায়, বিশৃঙ্খলা চালায়। দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৬ বছরের কিশোররাই কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত হচ্ছে।
কিশোর গ্যাংদের কাজ হচ্ছে মানুষকে উত্ত্যক্ত করা, মেয়েদের টিজ করা, বকাবকি করা, হুমকি দেওয়া, স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রীদের উদ্দেশে বাজে কমেন্ট করা, ভয়ভীতি দেখানো, সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টি করা ইত্যাদি। এই বখাটে কিশোররা পড়ালেখা না করে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তারা সাধারণত রাতে দলবদ্ধভাবে নেশাদ্রব্য পান করে। এতে তারা উগ্র হয়ে ওঠে। সাধারণত পাড়ার গলি, স্কুল-কলেজ গেট অথবা কোনো উদ্যানে দলবদ্ধভাবে এসব কিশোরদের দেখা যায়, যাদের চাহনিতে আছে রুক্ষতা, নেই নম্রতা-ভদ্রতার ছাপ। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি অথবা মোটরসাইকেলের বিরক্তিকর হর্ন বাজিয়ে প্রকাশ্যে মানুষকে উত্ত্যক্ত করা তাদের কাজ। সংঘবদ্ধ হয়ে বিশেষত কিশোরী কিংবা নারীদের তারা প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে। এই ধরনের চক্র এখন সমাজের ব্যাধির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের আমরা ‘কিশোর গ্যাং’ নামে চিনি।সমাজকে ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খুবলে খেয়ে ফেলছে এই অশুভ চর্চা। উঠতি বয়সের, স্কুল-কলেজগামী কিশোরদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওই দিকেই ঝুঁকছে। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শহুরে জীবনের পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাংগ এর আড্ডা দেখে আমি নিজেও শঙ্কিত থাকি এবং আমার প্রতিবেশীরাও শঙ্কিত থাকে। কিন্তু আত্মসন্মানের ভয়ে মাথা নীচু করে, ওদের না দেখার ভান করে অফিসে যাই কিংবা মসজিদে যাই।কেননা ওরা আমার সন্তানের চেয়েও কম বয়সি, তিন চারটা হোন্ডা নিয়ে আসে,অনেক কিশোরের হাতে সিগারেট, বেশ হৈ চৈ করে, তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, উগ্র কথোপকোথন, হাতাহাতি এসব দেখে মনে হয় দ্রুত এই পথটা পাড়ি দিতে পারলেই বাঁচি।এলাকার অনেক সিনিয়র সিটিজেন আমাকে বলে-
আপনারতো বেশ জানা শোনা আছে, আপনিতো প্রশাসনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন- আপনি একটু থানাকে বললে হয়তো কার্যকর হবে। কিন্তু আমিতো জানি – থানাতে গিয়ে আমি নিজেও কখনো ন্যয় বিচার পাইনি। ভদ্রলোকেরা থানাতে বড় বেশী অসহায়। পরিচয় দেয়ার পর কেউ কেউ হয়তো সন্মান দেখিয়েছেন,চা নাস্তাও করিয়েছেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি, ভদ্রভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে, কিছুটা শঙ্কা জাগিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।আইনের ছাত্র হিসেবে আমি বুঝি থানা কি করতে পারে কিংবা পারেনা! অফ দ্য রেকর্ড থানার কিছু ক্ষুদা আছে যা ভদ্রলোকেরা কখনোই পূরণ করতে পারবেনা। সেই ক্ষুদা কারা নিবৃত্ত করে তা আমরা সকলেই কম বেশী জানি। আবার থানার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমি এ-ও দেখেছি থানায় কিছু ভালো অফিসারও আছে কিন্তু তারা অসহায়, ভদ্রলোকদের জন্য কিছু করতে পারেনা বলে বিব্রতবোধ করে। এটা যে শুধু থানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়, প্রত্যেকটা সেক্টরে কিছু ভালো অফিসারের অসহায়ত্ব বিদ্যমান। এখন আমি যদি কিশোর গ্যাং এর বিষয়ে থানায় অভিযোগ করি, সে খবর পৌঁছে যাবে কথিত ‘ বড় ভাই’ এর কাছে এরপর গ্যাং এর কাছে। তারপর যা হবে তা হলো আমি ও আমার পরিবার শান্তিতে ঘুমুতে পারবোনা। অতএব চুপ থাকা ছাড়া উপায় কি? চুপ মানে একদম চুপ! বউ বলে চুপ থাকো,সন্তান বলে চুপ থাকো।তুমি এদের সাথে পেরে উঠবেনা।
কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমি তুমি সে বিক্ষিপ্তভাবে কোনো শক্তি নয়, আমি তুমি সে মিলে যখন আমরা হয়ে যাবো তখন বিশাল শক্তিতে রূপান্তরিত হবো।আর আমরাই পারবো – যে কোনো অশুভ শক্তিকে রোধ করতে। এজন্য যে কোনো সমাজের মানুষের মধ্যে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত, ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত।
মাঝে মধ্যে আমার সত্যি দু:খ হয়, যারা এই জাতিকে আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে তারা যদি এই আগ্রাসী কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির চর্চা করে বেড়ে ওঠে তবে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। সুতরাং আজকের কিশোর গ্যাং কালচার দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এদের হাতে ট্যাবলেট ধরিয়ে দিয়ে এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এদের পথভ্রষ্ট করছে । এসব গ্রুপের পিছনে এক বা একাধিক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ‘বড় ভাই’ থাকে। এই বড় ভাইয়েরা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে এসব গ্যাংকে ব্যবহার করে থাকেন । গ্যাং এর সদস্যরাও বড় ভাইদের শেল্টারে থেকে নির্বিঘ্নে করে যায় নানা অপরাধ। ‘বড় ভাই ‘ ‘রাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পর্শ থেকে আগলে রাখে গ্যাং সদস্যদের। এভাবে একটি কিশোর গ্যাং জন্ম নিয়ে দাপটের সাথে এলাকায় বিস্তার করে ‘অপরাধ সাম্রাজ্য’।
অতীতে একটা সময়ে সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষায় পরিবার ও স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের ভূমিকা ছিল। তারা কিশোরদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে প্রশ্রয় দিতেন না। এখন মুরব্বিদের হারানোর জায়গাটি নিয়েছেন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সুবিধাবাদীরা। তারা কিশোরদের ব্যবহার করেন।
বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিদিনই দেশজুড়ে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ এবং খুন-খারাবি ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে। মানুষ অস্বস্তিকর অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। সমাজের নিরীহ অংশ বিশেষ করে যাদের কোনো প্রভাব প্রতিপত্তি নেই বা প্রভাবশালী মহলের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক ও যোগাযোগ নেই তাদের আতঙ্কই বেশি।
এদের কারণে সমাজের ভদ্রলোকেরা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকেরাও উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়; কখন কারা জায়গা-জমি দখল করতে আসে বা চাঁদা দাবি করে অথবা স্কুল-কলেজে পড়ুয়া মেয়েটিকে কখন কোন বখাটে বিরক্ত করে বা স্কুলে যাওয়া ছেলেটিকে তাদের গ্যাংয়ের দলে ভিড়িয়ে ফেলে। এ ছাড়া এসব গ্যাংয়ের উৎপাতে পাড়ায় পাড়ায় মারামারি কাটাকাটি তো লেগেই আছে। এই কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি বর্তমানে তরুণদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। হিরোইজম বা বাহাদুরি, কাঁচা টাকা-পয়সা, মাদকাসক্তি, সাংস্কৃতিক চর্চার নামে সস্তা ছেলে-মেয়েদের অবাধে মেলামেশার তীব্র আকর্ষণ ইত্যাদি হাতছানি দিয়ে ডাকায় দ্রুত এ সমস্ত গ্যাং এবং তাদের সদস্যসংখ্যা বাড়ছে। সেই সাথে টিকটক, লাইকি ইত্যাদি নানান ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পথভ্রষ্ট হয়ে তরুণরা কিশোর গ্যাংয়ে নাম লেখাচ্ছে। ফলে সমাজকে ভেতরে ভেতরে উইপোকার মতো খুবলে খেয়ে ফেলছে এই অশুভ চর্চা। উঠতি বয়সের, স্কুল-কলেজগামী কিশোরদের একটি অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওই দিকেই ঝুঁকছে। ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে জমা হচ্ছে নিকষকালো অন্ধকার।
সমাজ চিন্তকরা মোটা দাগে সামাজিক অবক্ষয়, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবমাননা, দুর্বল কাঠামোর শিক্ষানীতি এবং রাজনৈতিক নীতিহীনতাকেই এই কিশোর গ্যাং নামক সামাজিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে গণ্য করছেন। কালের আবর্তনে আমাদের সামাজিক অবক্ষয় দৃশ্যমান। আমার মতে, কিশোরগ্যাং এর মূল কারণ, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অভাব, মানবিক আচরণ এবং কাউন্সিলিংয়ের অভাব, খারাপ সঙ্গীর সাথে চলাফেরা করা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ভিনদেশি সংস্কৃতির প্রভাব, সামাজিক অসঙ্গতি, হিরোইজম বা বীরত্ব প্রদর্শন, অপরাধনির্ভর দেশি-বিদেশি সিনেমা, সঠিক ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের অভাব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সীমাবদ্ধতা, শৈথিল্য ও দলীয় লেজুড়বৃত্তি, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, মাদকের সহজলভ্যতা, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতির কর্মকাণ্ডের সঙ্কোচন, বই পড়ার অভ্যাস ত্যাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা, পরীক্ষায় সহজে পাশের ব্যবস্থা,বিলাসী জীবন যাপনের মনোভাব,
টিকটক, লাইকি, অনলাইন গেমসের মতো অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ, ব্যর্থ পেরেন্টিং, বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের অধিকাংশ পিতা- মাতা প্যারেন্টিং সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা প্যারেন্টিং বলতে সন্তান জন্মদান ও সনাতনী পদ্ধতিতে তাদের বেড়ে উঠাকে বুঝে থাকেন। সন্তান কোথায় যাচ্ছে? কী করছে? কার সাথে মিশছে?— এব্যাপারে অধিকাংশ পিতা- মাতা খোঁজই নেন না। এ প্যারেন্টিং ব্যর্থতা কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম কারণ।
এক সময় আমাদের সমাজে মূল্যবোধের চর্চার ঐতিহ্য ছিল। সমাজে ‘মুরব্বি’ সংস্কৃতির চর্চা ছিল। পাড়ার বয়স্কদের ছোটরা সম্মান করত। দূর থেকেই সালাম দিত, হাতে সিগারেট থাকলে ফেলে দিত। অন্যায় করতে দেখলে বড়রাও ছোটদের শাসন করত। ছোটরা বেয়াদবি করলে বড়রা এগিয়ে এসে বিচার সালিশ বসাত। সেই ঐতিহ্য আজ ভেঙে পড়ছে। মুরব্বিরা ভীত, কিশোর-তরুণরা বেপরোয়া। সামাজিক সেই বন্ধন ও শৃঙ্খলা খসে পড়েছে।ভসন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তি করিয়েই বাবা মা দায়িত্ব শেষ করেন। সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে ইত্যাদি দেখার সময় তাদের নেই? তা ছাড়া ঘরে ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা, দ্বন্দ্ব-কলহ এবং পরিবারে ভাঙনের কারণে সন্তানরা সহজেই বিপথগামী হয়ে পড়ছে। এক শ্রেণীর নারীবাদীর উসকানিতে বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মীয় অনুশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে অনেকেই সামাজিক শৃঙ্খলা ও বন্ধনকে পদদলিত করে ফেলছে। ফলে ঘরে ঘরে আজ অশান্তির আগুন জ্বলছে। বস্তি থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত সব ঘরের ছেলে- মেয়েরাই এভাবে বিপথগামী হয়ে কিশোর গ্যাং এ নাম লেখাচ্ছে।
কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির চর্চার পেছনে সবচেয়ে প্রভাবশালী যে কারণ সেটি হলো- রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়,
অভিভাবক ও থানাগুলোর নির্লিপ্ততা।
এই চারটা সেক্টরে যদি সক্রিয় হওয়া যায় তাহলে হয়তো কিশোর গ্যাংগ বন্ধ করা যাবে। থানা, স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধি সক্রিয় হলে আমি নিশ্চীত কোনো কিশোর গ্যাংগ থাকবেনা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কিশোর গ্যাং এখন ‘বিষফোঁড়ায়’ পরিণত হয়েছে। যে কিশোর-তরুণ দেশের ভবিষ্যত, দল বেঁধে তাদের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা উৎকণ্ঠার বিষয়। ভবিষ্যত প্রজন্মই যদি উৎচ্ছন্যে কিংবা গোল্লায় যায়, তাহলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু থাকে না।তাই কিশোর গ্যাং দমনে আমাদের সবাইকে সক্রিয় ও সচেতন হতে হবে।
এখন আমাদের করণীয় হচ্ছে,
ক) সামাজিক সচেতনতা তৈরি করে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করা।
খ) কিশোররা যেন কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত না হয় তার জন্য তাদের মোটিভেট করা,
গ) ধর্মীয় অনুশীলনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ঘ) কিশোর গ্যাং যে পরিবার থেকে গড়ে উঠবে, সেই পরিবারকে সচেতন করতে হবে।পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সমাজ ও পরিবারের অভিভাবকদের জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজ সন্তানের চলাফেরা ও আচার-আচরণের পরিবর্তনের দিকে তাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে।
সন্ধ্যার পর কোন আড্ডা দেওয়া যাবে না, সেই দিকে নজর রাখতে হবে।
ঙ) আমাদের সমাজে, পাড়া-মহল্লায় যেসব প্রভাবশালী রয়েছেন, তাদের উচিত কিশোর গ্যাংয়ের উগ্র সদস্যদের প্রথমে বুঝানো, সঠিক পথে আনার চেষ্টা করা এরপরও না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া।
চ) শিশু-কিশোরদের নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
ছ) নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ সুরক্ষা এবং ধর্মীয় অনুশাসণের ক্ষেত্রে মসজিদের ইমাম ও আলেম- ওলামারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।ইমামদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিকতা বোধের শিক্ষা দিতে হবে।
জ) এলাকার বড় ভাই নামক ব্যক্তি যে কিনা কিশোরদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ঝ) ১৮ বছরের নিচে কোন কিশোর কিশোরী যাতে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতে না পারে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে।
ঞ) আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কে সঠিক ভাবে গ্যাং সম্পর্কে ডাটা সংগ্রহ করে কিশোরদের মুল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কাউন্সিলিং করতে হবে।তাদের দৃষ্টিভংগী বদলাতে হবে।টিকটক, লাইকি, অনলাইন গেমস এগুলো বন্ধ করতে হবে।
আমাদের এখনই উচিত কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে পাড়া-মহল্লায় সচেতনতামূলক কর্মকান্ড শুরু করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার অভিভাবক শ্রেণীর সাথে সমন্বয় করে কিভাবে কিশোরদের সুপথে পরিচালিত করা যায়, এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত বৈঠক করতে হবে।
এজন্য সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।যেকোনো সমস্যা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে।বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজকে সামাজিক অবক্ষয় রোধে ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে থেকে কাজ করে যেতে হবে।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই আজকের কিশোর আগামীর ভবিষ্যৎ, এদের কে সঠিক পথ দেখানো আপনার আমার নৈতিক দায়িত্ব।