ঢাকা, রবিবার, ১১ মে, ২০২৫, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩২, ১২ জিলকদ, ১৪৪৬
সর্বশেষ
শ্রীশ্রী মা মগধেশ্বরী জাগ্রত মন্দিরের ২১তম বার্ষিকী
“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের যৌক্তিকতা: বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি”
চট্টগ্রামে মাঠ প্রশাসনের দক্ষতাবৃদ্ধিতে কর্মশালা
রহমতে আলম হজ্ব কাফেলার হজ্ব প্রশিক্ষণ কর্মশালা ২৫ অনুষ্টিত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও  মিথ্যা সংবাদ প্রচারের প্রতিবাদে সীতাকুণ্ডে বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন
চট্টগ্রামে বিশ্ব রেড ক্রস রেডক্রিসেন্ট দিবস পালিত
নতুন রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ এর আত্মপ্রকাশ
বিএনএস ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্বে সাংবাদিক কামরুল ইসলাম
চট্টগ্রামে জি এম আইটি ‘র প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন
পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন ইপসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোঃ আরিফুর রহমান

“আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের যৌক্তিকতা: বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি”

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি প্রধানতম দল। আওয়ামীলীগ একটি অজেয় রাজনৈতিক সংগঠন।আওয়ামী লীগের রয়েছে ৭৬ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।  মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর হাতে গড়া  আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবী কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।আমার কাছে মনে হয়েছে -একটি নিষ্প্রভ, অনাকাঙ্ক্ষিত,অনভিপ্রেত ও হাস্যকর দাবী।
আওয়ামী লীগের জীয়নকাঠি আকস্মিক প্রবল তরঙ্গে হারিয়ে যাবে এমনটা ভাবারও অবকাশ নেই।

আজকের পরিবর্তিত পরিবেশে জনমতকে উপেক্ষা করে কাগজে কলমে নিষিদ্ধ করা গেলেও আওয়ামী লীগকে কখনো  স্তব্ধ করা যাবেনা। দল নিষিদ্ধ করলেও রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয় না এটা অতীতে প্রমাণিত হয়েছে। বরঞ্চ হিংসার দাবানলে রাজনীতির ঘরে আগুন দিতে গেলে সে আগুনে এক সময় নিজেদের পুড়ে ছাই হতে হবে- এটাই ঐতিহাসিক সত্য।
ইতোমধ্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল।
আওয়ামীলীগ এর কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তিগত দায় থাকতে পারে, নেতাদের সামষ্টিক দায় থাকতে পারে, কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি না।”
একটি দলকে কখন সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত– এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, “যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি নস্যাৎ করতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও শোষণহীন সমাজকে ধ্বংস করার জন্য যারা পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম করে, তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলা উচিত। তবে মতামত প্রকাশ যতটা অবারিত রাখা যায়, ততটাই ভালো।”
অ্যাটর্নি জেনারেলও বলেন, “আওয়ামী লীগের অনেক ভালো নেতাকর্মীও রয়েছেন, তারা দলের মতাদর্শ ধারণ করেন। এজন্য দল নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই।”

আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী নই।তবে রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম,সেজন্য রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে আমার পর্যবেক্ষন থাকে।
গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিউজফিড জুড়ে চোখে পড়ে কিছু ছেলে মেয়ে এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী কিংবা জামাত শিবির কর্মী (দাড়ী টুপি দেখে ধারনা করছি) যমুনার সামনে একত্র হয়েছে – আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ করার দাবীতে। যদিও আমাদের গ্রামে ছোট খাটো মেজবানে  এর চেয়েও বেশী লোকের সমাগম দেখা যায়। শিবির কর্মীদের উপস্থিতি বাদ দিলে হাতে গনা কয়জন থাকবে সেটা আপনারাই বুঝে নিবেন।যেহেতু চিত্রটি সোশ্যাল মিডিয়াতে  দৃশ্যমান ছিল।

গতরাতে সেলিনা হায়াত আইভী আপার বাড়ীর সামনে আপার এ্যারেস্ট ঠেকাতে  যত লোক ভীর করেছে,এনসিপি (NCP) টাকা দিয়ে, বিরানী খাইয়েও এতো লোক জড় করতে পারবে বলে মনে হয়না।আইভী  আপার মত সৎ, পরিচ্ছন্ন, নির্লোভ ও নির্মোহ নেতাদের সার্থকতা এখানেই।

আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের এই দাবীকে আমি কি তাদের আষ্ফালন বলবো নাকি নির্বুদ্ধিতা বলবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছিনা।
আপাতত: নির্বুদ্ধিতায় বলছি এজন্য যে, তারা আসলে আওয়ামীলীগ এর ইতিহাসই জানেনা।ইতিহাস জানলে এমন হাস্যকর দাবী নিয়ে তারা মাঠে নামতোনা।
অবশ্য কয়েকদিন আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাতকারে দেখলাম- একটা সমাবেশে এনসিপি (NCP)র  বালকেরা টাকার বিনিময়ে কিছু লোকজন  জমায়েত করেছে।যারা এসেছে তারা নিজেরাই জানেনা কাদের সভায় এসেছে, কেন এসেছে,কোন দাবী নিয়ে এসেছে!
৫ আগস্ট এর পূর্বে কোটা আন্দোলনের নামে যে প্রতারণার ফাঁদ তৈরী করা হয়েছিল সেই ফাঁদে আর কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক জড়াবেন না।এটা অনেকটাই নিশ্চীত।
তাছাড়া বিএনপিও (BNP) মুক্তিযোদ্ধের চেতনা সম্পন্ন একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল, বিএনপি’র (BNP) প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা,একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।বিএনপি’র (BNP) অধিকাংশ সিনিয়র নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা। ৭১ এর সাথে তাদের চেতনার সম্পর্ক, রক্তের সম্পর্ক। সেজন্য  ৭১ বিরোধী শক্তি থেকে
বিএনপি (BNP) দূরে সরে আছে।আওয়ামীলীগ , বি এন পি,জাতীয় পার্টি বাদ দিলে – বাকী থাকে ফুটবল টিম এর মত ছোট খাটো কয়েকটি দল।জামাত তন্মেধ্যে মোটামুটি সুসংগঠিত দল।
অতএব সমীকরণটা আপনারাই মিলিয়ে নিবেন,যারা যমূনার সামনে লাফ ঝাপ দিচ্ছে তাদের সংখ্যা কতজন হতে পারে? ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে এ কয়জন মানুষের মতামত গ্রহণযোগ্য হবে কিনা?
সে যা হোক,কথা হচ্ছিল আওয়ামীলীগ এর ইতিহাস নিয়ে।নির্বোধ বালকেরা কি জানেন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা কারা?আমারতো মনে হয় আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতাদের ইতিহাস জানলে তারা কিছুতেই এই আষ্ফালন দেখাতো না।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন টাঙ্গাইলের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে  ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান,শামসুল হক, শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন, আবদুল জব্বার খদ্দর, আতাউর রহমান খান, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আলী আমজাদ খান, শামসুদ্দীন আহমদ (কুষ্টিয়া), ইয়ার মুহম্মদ খান, মওলানা শামসুল হক, মওলানা এয়াকুব শরীফ, জাতীয় চার নেতা, আবদুর রশিদ প্রমুখ এই দলের নেতৃত্ব দেন।অনেক নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক এর হাতে গড়া এই দল।
আওয়ামীলীগের প্রথম সভাপতি ছিলেন-মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (২৩ জুন, ১৯৪৯ – ১৮ মার্চ, ১৯৫৭), দ্বিতীয় সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ( ১৯৫৭ – ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬) তৃতীয় সভাপতি ছিলেন -বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,(০১ মার্চ ১৯৬৬ – ১৯৭৪), চতূর্থ সভাপতি ছিলেন-আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (১৯৭৪ – ১৯৭৫),এরপর মহিউদ্দিন আহমেদ (ভারপ্রাপ্ত),আব্দুল মালেক উকিল (১৯৭৮-১৯৮১),পরবর্তিতে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেন (১৭ মে ১৯৮১ – বর্তমান)।
ভাসানী ছিলেন মজলুমের কন্ঠস্বর,উদারপন্থী প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার অনুসারী, ধর্মীয় সংকীর্ণতা, গোঁড়ামি বা কুসংস্কারবিরোধী একজন মানুষ।কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনের তিনি ছিলেন পুরোধা।
বাঙালির অধিকার আদায়ে ভাসানীর আত্মত্যাগ, সাধনা ও সংগ্রাম তাঁকে কিংবদন্তির মহানায়কে পরিণত করে।তাঁর সম্পর্কে ভারতের দৈনিক ‘স্টেটসম্যান’ যথার্থই লিখেছিল—Forever the Fighter, চিরকালের যোদ্ধা।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন গণতন্ত্রের মানসপুত্র,উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ,তিনি ছিলেন একাধারে প্রতিভাবান রাজনৈতিক সংগঠক,আইনজ্ঞ, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভা ও গণপরিষদের সদস্য, অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রীসহ তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূলনেতাদের মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অন্যতম।
আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা,বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি।বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান টকশোতে  বলেছিলেন – ‘সবগুলো চুনোপুটি দল একত্রে হয়েও বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর শক্তিও অর্জন করতে পারবেনা।’ যে তর্জনীর-  ইশারায় ও নির্দেশে পরাধীনতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলো বাংলার মুক্তিকামী মানুষ।যে তর্জনী বাঙালির কাছে সাহস ও শক্তির প্রতীক। যে তর্জনীর গর্জনে একটি জাতির অভ্যুদয় ঘটেছিল।
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় শুধু অপরাধের বিচার নয়, বরং এর সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় জড়িত।

আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী  এবং আওয়ামীলীগের  সাংস্কৃতিক মূলধন। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের অনেক মহারথী ও মতামত প্রভাবক আওয়ামী লীগের শক্তি।
তাই বলছি নিষিদ্ধ বললেই নিষিদ্ধ হয়ে যায়না।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জামায়াতে ইসলামীসহ পাঁচটি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে গৃহীত সংবিধান অনুযায়ী সব ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এ সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে আবার কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে গত ৩১ জুলাই। কিন্তু দলটি যে আরও বড় কলেবরে ফিরে এসেছে, তা এখন স্পষ্ট। এতে প্রমাণিত হয় যে, নিষিদ্ধ করে রাজনীতিক কার্যক্রম বন্ধ করা যায়না।
বিশ্ব্রাজনীতিতেও আওয়ামীলীগ একটি শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত।
আওয়ামীলীগের পররাষ্ট্রনীতি ছিল – সকলের সাথে বন্ধুত্ব,কারও সাথে শত্রুতা নয়।ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশের  সাথেই ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে আওয়ামীলীগের।
১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
আওয়ামী লীগ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।
এখনও যারা বড় বড় দলগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাও অনেকে  কোনো না কোনো ভাবেই এসকল নেতাদের শিষ্য।

বাঙালি ও বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার সব কিছুর সঙ্গেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। কোনো সাম্রাজ্যবাদী শাসকের পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা জমিদার-ভূস্বামীদের হাতে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি।সামরিক জান্তা, দখলদার ক্ষমতাসীন সরকারের প্রভাব-প্রতিপত্তির অবৈধ গর্ভেও আওয়ামী লীগ জন্ম নেয়নি।
প্রতিষ্ঠার পর অতি দ্রুততম সময়ে আওয়ামী লীগ গতানুগতিক রাজনৈতিক সংগঠনের বাইরে জনসাধারণের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত একটি অনন্য সংগঠনে পরিণত হয়। কালক্রমে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিভূ হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। জন্মের পাঁচ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৫৪ সালের ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট ২২৮টি মুসলিম আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন লাভ করে। ২২৩ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ১৪৩টি আসনে জয়লাভ করে। নবীন দল আওয়ামী লীগের এই অভূতপূর্ব সাফল্য আওয়ামী লীগের প্রতি জনসাধারণের অনন্য ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা, বাঙালির অন্তরে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তাগিদ গেঁথে দেওয়া, জেল-জুলুম, মামলা, নির্যাতন, ষড়যন্ত্রে দমে না যাওয়া, বরং ত্যাগ, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, সততা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা দিয়ে মোকাবেলা করার বঙ্গবন্ধুর অনন্য রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নির্ভরশীল বন্ধু হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে তাঁকে এক বিশেষ উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাঙালির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এমন দরদি নেতা, জনক, স্থপতি, বন্ধু একবারই জন্মেছিল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাঙালির আত্মার বন্ধন তৈরি হয়েছে বলেই মৃত্যুতেও সে বন্ধন ছিন্ন হয়নি, হওয়ার নয়। তাইতো মৃত্যুর কয়েক দশক পরও মুজিবকে মুছে ফেলার সব অপচেষ্টা পদদলিত করে বিশ্বব্যাপী বিবিসির জরিপে কালজয়ী রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ধাপে ধাপে জাতিকে প্রস্তুত করেছে মুক্তিযুদ্ধের জন্য। স্বাধীন বাংলাদেশের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের পর্যায়ে নিয়ে যেতে ভাষা আন্দোলনকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে রূপ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে রূপ দিয়েছে। স্বায়ত্তশাসনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দিয়ে অর্জন করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র মিলে লাখ লাখ মানুষ, যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না, তারাও মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ভালোবেসে জীবন উৎসর্গ করেছে, স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে।

দেশের মানুষ গতানুগতিক রাজনৈতিক সংগঠনের বাইরে গভীর মমতায় ভালোবেসেছে আওয়ামী লীগকে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিকতন্ত্রের নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর যৌথ আন্দোলনে সামরিকতন্তের অভিশাপমুক্ত হয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিচার করা যাবে না মর্মে দায়মুক্তি আইন করে খুনিদের বাঁচাতে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তৈরি করা হয়েছিল। আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিবেক ও সভ্যতাবিরোধী এই আইন বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে অসভ্য-জংলি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ললাট থেকে সেই কলঙ্ক তিলক অপসারণ করেছে।
গত দশকে  বাংলাদেশ জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা নৈমিত্তিক হয়ে ওঠে। গভীর অমানিশা নেমে আসে বাঙালি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জীবনে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে উদ্ধার করে আলোতে ফিরিয়ে আনে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনো সরকারে, কখনো বিরোধী দলে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে মানুষ যেমন অকাতরে ভালোবেসেছে, তেমনি আওয়ামী লীগও উজাড় করে ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে চলেছে। আওয়ামীলীগের উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গেলে আর্টিকেলটি অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে।
সংক্ষেপে বলা যায়- বয়ষ্ক ভাতা,বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, গৃহহীনদের ঘর প্রদান ( আশ্রয়ন প্রকল্প), বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, ফ্লাইওভার, পদ্মাসেতু,কর্নফুলী টানেন,এলিভেটেড এক্সপ্রেস, সাবমেরিন ক্যাবল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র,ভারত মায়ানমার এর সাথে সমুদ্র সীমা জয়,ছিটমহল, অগ্রসরমান জিডিপি,মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি,রিজার্ভ বৃদ্ধি, দরিদ্রতম দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর প্রক্রিয়া কি না করেছে।
তবে হ্যাঁ, আওয়ামীলীগের কিছু যে ভুল ছিলোনা তা নয়।যারা ভুল করেছে তারা আইনী প্রক্রিয়ায় দূর্নীতি প্রমাণিত হলে নিশ্চই সাজা পাবে।
ভুলতো এখনোও হয়।দূর্নীতি এখনও হয়।মন্ত্রীর পি এস, সমন্বয়কদের দূর্নীতিতো এখন ভাইরাল ইস্যু।

এ কথা সত্য যে, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শবিরোধী বহু দানবের অনুপ্রবেশ ঘটেছে আওয়ামী লীগে। ভয়ংকর বদনাম হয়েছে দলের।আওয়ামীলীগের ভুল ছিল সে সকল দানবদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে  কঠোর হতে পারেনি আওয়ামীলীগ।যারজন্য জনমনে আস্থার সংকট দল ও দেশকে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

প্রচলিত আছে, ‘আওয়ামী লীগ হারলে একা হারে না, সেই সঙ্গে দেশ ও জনগণও হারে।’ ৫ ই আগষ্ট এর পর আওয়ামীলীগকে নিয়ে ভালো মন্দ অনেক কথায় হয়।রাজনীতিতে রূপক অর্থে অনেক কথায় বলা যায়৷ এ নিয়ে তর্ক বিতর্কও থাকে।৭.৬২ বুলেট নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। আবার ম্যাটিকুলাস প্ল্যান এর কথাও শোনা যায়।(METICULOUS: very careful and with great attention to every detail) কোনোটা সত্য কোনটা মিথ্যা সেটা বিচারিক আদলতেই প্রমাণিত হবে।আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের এতো গভীরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

এখন জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে -বাংলাদেশ কি আবার উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর বিচরণ ভূমি হবে নাকি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হবে?

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved