চট্টগ্রাম : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সমন্বয়কের একাংশের চট্টগ্রাম মহানগরসহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলাসহ নতুন ৩ কমিটির ছাত্র সমন্বয়ক সব কমিটিকে বাতিল অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলন করে । ৩ কমিটির অন্তত ৫০ থেকে ১০০ জন পদত্যাগ করেছেন। পরে লালখান বাজার মোড়ের এক পাশ অবরোধ করে।
এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ দফা দাবি তুলেন। গত ৫ ই আগস্ট এর আগে নিজেদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়তায় জীবনঝুঁকি সত্বেও আন্দোলন করে। আন্দোলনরতদের নতুন কমিটি থেকে উপযুক্ত পদ না পাওয়া, পদ বঞ্চিত ও নতুন কমিটি থেকে বাতিল হওয়া সুবিধা বঞ্চিত নানা ইস্যুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবি তুলে ধরে।
১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্ররা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে নতুন কমিটি থেকে সুবিধা বঞ্চিত ছাত্র সমন্বয়করা নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। বিকেল ৩টা থেকে নগরীর লালখানবাজার মোড়ে আন্দোলনের একাংশের নেতারা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন— নতুন কমিটিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা জোবায়রুল আলম, নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা চৌধুরী সিয়াম ইলাহি ও সংগঠক আবু বাছির নাঈম।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলার তিন ইউনিটের কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। অবরোধে অন্য পাশ দিয়ে যান চলাচলের প্রভাবে লালখান বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যানজট দেখা দিয়েছে। অবরোধকারীরা জানিয়েছেন, কমিটি বাতিল না হলে তারা সড়ক ছাড়বেন না।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আগামী ৬ মাসের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। ৩টি কমিটিতে মোট ৭৫৪ জনের নাম রয়েছে। কমিটি গঠনের প্রতিবাদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ৩ কমিটির অন্তত ৫০ থেকে ১০০ জন পদত্যাগ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কমিটিতে সম্মুখযোদ্ধাদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে নারী হেনস্তা ও কিশোর গ্যাংকে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, তাদের নিয়ে একপক্ষীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। সনাতন ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। নারী সহযোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এর আগে অবরোধকারীরা সোমবার দিবাগত রাতে ঘোষিত তিন কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেলকে চট্টগ্রামে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি নতুন কমিটি গঠন করতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে সড়ক অবরোধের আল্টিমেটাম দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কারী ছাত্র বক্তারা বলেন,চট্টগ্রামের সকল ছাত্র সমন্বয়ে কমিটি বাতিলের দাবিতে আল্টিমেটামসহ ৩ দফা দাবি ঘোষণা করেন। তিন দফার মধ্যে রয়েছে ১/ বিকাল তিনটার মধ্যে গতকাল প্রকাশিত কমিটি বাতিল করতে হবে। মূল আন্দোলনকারীদের নিয়ে সাপেক্ষে নতুন কমিটি বাদ দিয়ে অন্তবর্তী কালীন কমিটি ঘোষণা করতে হবে। ২/আগামী তিন দিনের মধ্যে সকল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্তে প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করে প্রমাণিত হলে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩/ব্যক্তির পছন্দের পঠিত এই কমিটির সকলের জড়িতদের নাম প্রকাশ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্ররা নিজেদের ৫ই আগস্ট এর আগে মূল আন্দোলনে কারীদের সমন্বয়হীন কমিটি দ্রুত বাতিলের দাবি জানাই।
নতুন কমিটিকে নানা সমালোচনা করে নেতিবাচক প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। প্রহসন মূলক, একপাক্ষিক, আন্দোলনের পরে নিজেদেরকে ছাপিয়ে প্রচার প্রসারকারীদের,ব্যবসায়ী আমলাদের, নারী হেনস্তাকারী কিশোরগ্যাং, চাটুকারিতা,ডটগার্ড ভ্যানগার্ড লীগ পৃষ্ঠপোষকদের নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়। সমন্বয়হীন এমন নতুন কমিটি গঠন করে আন্দোলন শহীদের সাথে বেঈমানি বলে তুলনা করা হয়।
নতুন কমিটিতে বৈষম্যমূলক একতর কমিটি গঠনসহ পূর্ব থেকে অভিযোগ করা সত্ত্বেও নানা অনিয়ম ইস্যুতে কেন্দ্রীয় কমিটির অবহেলা গাফিলতি নানা অনিয়ম সহ বিভিন্ন সমালোচনা করে নেগেটিভ ডেসক্রিপশন বিষোদগার করে সুবিধা বঞ্চিতরা স্লোগান আন্দোলন।
প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কমিটির সকল কার্যকলাপকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে দায়ী করা হয়। চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত রাফিকে নতুন কমিটিকে শুভেচ্ছা জানানোর কারণে। তাকেও উক্ত কমিটির সাথে জড়িত করে নানা নীতিবাচক মন্তব্য করা হয়। প্রয়োজনে হাসনাত আব্দুল্লাহকে বীর চট্টগ্রাম অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।
এ সময় উপস্থিত আন্দোলনকারী সমন্বয়কারীর মধ্যে চট্টগ্রামের জেলা সমন্বয়ক আন্দোলনকারী ছাত্রসহ অন্যান্য আন্দোলনকারী সমন্বয়কসহ উপস্থিত ছাত্রবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন।
গতকাল রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিজাউর রহমানকে আহ্বায়ক ও সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ৩১৫ সদস্যের মহানগর কমিটি দেওয়া হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবাইর হোসেনকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে ৩২৭ সদস্যের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াছির আরফিন চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. রইছ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ১১২ সদস্যের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য : বর্তমান ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণেই স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়। ছাত্ররাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের মূল শক্তি উৎস। তাই অন্তবর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ নয়। ছাত্রদের ভিতরে গ্রুপিং বিভেদ নয়। সত্য প্রকাশে প্রচারে তথ্য বিভ্রাট নয়। প্রকৃতদের হোক মূল্যায়ন যথাযথ পদমর্যাদায় সম্মানে ভূষিত। রাষ্ট্র সমাজ ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় বৃহৎ জনস্বার্থে দেশজাতি সকলের কাম্য।
মূলত বিগত দিনগুলোতে ছিলনা বাগ স্বাধীনতা। ছিলনা গণতন্ত্র। ছিল না অধিকার। মূলত ছাত্র আন্দোলনকারীদের রক্ত সাগরের বিনিময়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। মিশন-ভিশন বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষ ও ছাত্রদের বিগত দিনের চাওয়া পাওয়া গুলোবাস্তবায়ন ও শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।
যা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান ও মুখ্য উদ্দেশ্য।
যোগ্য ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়াসহ ৩দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে চট্টগ্রামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
নতুন কমিটিবাতিল করে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি সংবাদ সম্মেলনে সভায় ৩ দফা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। অতি উৎসাহী হয়ে হত্যাকাণ্ডে এবং দমন-পীড়নে জড়িত ছিল, তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডারদের মধ্যে যারা হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদেরকে দ্রুত সময়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন এবং শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও নিহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ পলাতক আওয়ামী লীগের সন্ত্রসীদের আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পর্যায়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয় পরিচয় ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্তদের সরিয়ে যোগ্য ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্য দূরীকরণে সুশাসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের যুগোপযোগী পরিবর্তন করতে হবে। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিশেষ সুবিধা বাদ দিতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ১৫ থেকে ২০% বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বন্ধকৃত রাষ্ট্রীয় কলকারখানা দ্রুত সময়ে চালু করতে হবে। শ্রমিকদের প্রাপ্য আধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষাখাতে বৈষম্য দূরীকরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত টিউশন ফি বাতিল করতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে এবং সেশনজট মুক্ত করতে ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসে অবস্থানরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ন্যায় অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিদেশে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।