ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২, ২১ জিলকদ, ১৪৪৬
সর্বশেষ
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দেশের প্রথম আবহাওয়া ক্লাব উদ্বোধন
মানবসেবা সংগঠন উদ্যোগে হালিশহরে শরবত বিতরণ
চট্টগ্রামে পাহাড়ধস এর প্রেক্ষিতে ট্রিগার থেশহোল্ড বিষয়ক বৈধকরণ সভা অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্ববৃহৎ (৫ম) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরগুলো এক কন্ঠস্বরে রূপান্তর হলে অপারেজেয় শক্তির অভ্যুদয় ঘটে
চট্টগ্রামে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আড়ম্বরপূর্ণ শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
৯৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে মা দিবস ও অভিভাবক সমাবেশ
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ এবং অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইটা কঠিন
সীতাকুণ্ডে প্রকৌশলীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হামলা 
শ্রীশ্রী মা মগধেশ্বরী জাগ্রত মন্দিরের ২১তম বার্ষিকী

ইতেকাফ: আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়

ইতেকাফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং পাপ থেকে মুক্তির সুযোগ করে দেয়। এটি মূলত রমজান মাসের শেষ দশ দিনে পালন করা হয়, যেখানে মুসলমানরা মসজিদে অবস্থান করে পূর্ণ মনোযোগের সাথে ইবাদত করে থাকেন।

ইতেকাফ শব্দটি আরবি “আকফ” থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে নির্দিষ্ট কোনো কিছুর সঙ্গে আবদ্ধ করা। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, ইতেকাফ হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, দোয়া-দরুদ পাঠ করা এবং আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

পবিত্র কুরআনে এবং হাদিসে ইতেকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতি বছর রমজানের শেষ দশ দিনে ইতেকাফ করতেন এবং তাঁর সাহাবীদেরও এটি পালনের উপদেশ দিতেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতেকাফ করে, আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের আগুনের মাঝে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করেন।” (তিরমিজি)

ইতেকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো দুনিয়াবি ব্যস্ততা ও মোহ-মায়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা। এটি আত্মশুদ্ধির অন্যতম প্রধান উপায়, যা মানুষের অন্তরকে পবিত্র করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ সৃষ্টি করে। ইতেকাফ পালনকারী ব্যক্তি সাধারণত মসজিদে অবস্থান করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করেন। তিনি কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া ও দরুদ পাঠে সময় কাটান। কোনো ধরনের অহেতুক কথা বলা বা দুনিয়াবি কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া ইতেকাফের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

রমজান মাসের শেষ দশ দিনে ইতেকাফ পালনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এই সময়ের মধ্যে রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। যারা এই সময়ে ইতেকাফ পালন করেন, তারা লাইলাতুল কদরের ফজিলত অর্জনের সুযোগ পান এবং তাদের গুনাহ মাফের মাধ্যমে জান্নাতের পথ প্রশস্ত হয়।

ইতেকাফ পালনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। প্রথমত, মনের মধ্যে ইতেকাফের নিয়ত করতে হয়। পুরুষদের জন্য মসজিদে অবস্থান করা ফরজ, আর নারীরা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইবাদতের উদ্দেশ্যে অবস্থান করতে পারেন। ইতেকাফ পালনকারীর উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আসকার এবং দোয়া-ইস্তিগফারে সময় ব্যয় করা। অহেতুক কথা বলা, ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া বা দুনিয়াবি কাজ করা ইতেকাফের মূল উদ্দেশ্যের বিপরীত।

তবে, শরীরের প্রয়োজন, খাবার গ্রহণ বা প্রাকৃতিক প্রয়োজনের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ। তবে বিনা প্রয়োজনে মসজিদ ত্যাগ করা হলে ইতেকাফ ভঙ্গ হবে। নারীদের ক্ষেত্রে পবিত্রতা থাকা এবং হায়েজ-নেফাস মুক্ত থাকা আবশ্যক।

বর্তমান যুগে, যেখানে মানুষ দুনিয়াবি ব্যস্ততা ও প্রযুক্তির আসক্তিতে ডুবে আছে, সেখানে ইতেকাফ মানুষের মন ও আত্মাকে প্রশান্তি দেয় এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বাড়ায়। এটি ব্যক্তি জীবনের পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের অন্যতম উপায়।

সর্বোপরি, ইতেকাফ হলো এক মহৎ ইবাদত, যা মুসলমানদের আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেয় এবং তাদের আত্মশুদ্ধি ও পরকালের মুক্তির পথ প্রশস্ত করে।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
error: protected !!

Copyright© 2025 All reserved